ED Attacked in Sandeshkhali

গোলমাল করলেই ৫০০ টাকা বকশিস!

বাহিনীর দ্বিতীয় দলে রয়েছে ওই বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। যারা ‘দাদা’ বললেই লোক জুটিয়ে হাজির হয়।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৪
Share:

সন্দেশখালিতে চরম উত্তেজনা। —ফাইল চিত্র।

গোলমাল করলেই ৫০০ টাকা!

Advertisement

সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহানের নিজস্ব বাহিনীর জনপ্রতি এমন বকশিস নাকি বাঁধা! বলছেন দীর্ঘ দিন এ এলাকায় শাহজাহানের ‘গুন্ডামি’ দেখা সাধারণ মানুষের অনেকেই।

শুক্রবার ওই তৃণমূল নেতার বাড়িতে তল্লাশিতে এসে আক্রান্ত হয়েছেন ইডি আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। শাহজাহানের অঙ্গুলিহেলনেই হামলা— এই অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। ঘটনার পর থেকে শাহজাহানের পাত্তা মিলছে না। তা সত্ত্বেও শনিবারও তাঁর নাম করতেই এলাকার মানুষ গুটিয়ে গিয়েছেন।

Advertisement

‘শাহজাহান বাহিনী’র দাপট এতটাই যে, নাম শুনে ডরায় না, এমন মানুষ এ তল্লাটে পাওয়া কঠিন। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, বাহিনীতে দু’টি ভাগ আছে। একটি শাহজাহানের একেবারে নিজস্ব লোক নিয়ে তৈরি ‘কোর গ্রুপ’। যারা শাহজাহান ও তাঁর ভাইদের ব্যবসাস্থলের বেতনভুক কর্মচারী। অভিযোগ, এরা গুলি চালানো, বোমা মারা, ভাঙচুর-মারধর করা— সবেতেই পারদর্শী। এদের সংখ্যা অন্তত ২৫০। কোথাও গোলমাল করতে পাঠানো হলে মূলত এদের জন্যই বকশিস বরাদ্দ থাকে। কারণ, আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে এরাই থাকে প্রথম সারিতে।

বাহিনীর দ্বিতীয় দলে রয়েছে ওই বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। যারা ‘দাদা’ বললেই লোক জুটিয়ে হাজির হয়।

শাহজাহানের ওই ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে পুরনো মোটরবাইক সংগ্রহ করা হয়। সেই সব বাইকে নম্বরপ্লেট থাকে না। এমন কয়েকশো বাইক শাহজাহানের বিভিন্ন ডেরায় আছে। এই সব বাইকে করে তাঁর বাহিনী দাপিয়ে বেড়ায় গোটা সন্দেশখালি বিধানসভা এলাকায়। বাইকের তেলও মেলে নিখরচায়।

এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘সন্দেশখালির বিভিন্ন পেট্রল পাম্প মালিকদের বাধ্য করা হয় বিনামূল্যে অন্তত ১ লিটার করে পেট্রোল ১০০ বা ২০০ বাইককে দিতে। আবার কখনও কোনও ব্যবসায়ীকে বাধ্য করা হয় টাকা দিতে।’’

এ সব নিয়ে শাহজাহানের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। শনিবারও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে, শাহজাহানের লোকজনের বেশ কিছু দাপটের কথা সামনে এসেছে। কেমন সেই দাপট?

২০১৯-এর জুনে সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিডিও কৌশিক ভট্টাচার্যকে তাঁর দফতরে ঢুকে মারধরের অভিযোগ ওঠে সন্দেশখালি পঞ্চায়েত এলাকার এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। যিনি শাহজাহান ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। শুধু তা-ই নয়, সেই বিডিও যাতে হাসপাতালে যেতে না পারেন, সে জন্য তাঁকে অফিসে আটকে রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ।

‘শাহজাহান বাহিনী’ এতটাই বেপরোয়া যে পুলিশকেও ডরায় না। কয়েক মাস আগে সরবেড়িয়ায় অবরোধ করে ওই বাহিনীর লোকজন বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগ তুলে। সেই অবরোধ তুলতে পারেননি ওসি। পুলিশ বাহিনী নিয়ে মিনাখাঁর তৎকালীন এসডিপিও ঘটনাস্থলে আসেন। এসডিপিও অবরোধ তুলে নিতে বললেও বেপরোয়া ভাবে পুলিশের দিকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন বর্তমানে সরবেড়িয়া-আগারহাটি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লা। যিনি শাহজাহানের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত। এর পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকা। পুলিশকে লক্ষ করে গুলি-বোমা চলে। একাধিক পুলিশকর্মী জখম হন ইটের আঘাতে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হয়। পিছু হটতে হয় পুলিশকে।

২০১৯ সালে নভেম্বরের এক রাতে খুলনার পোলপাড়াতে একটি গন্ডগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের বাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও চলে বলে অভিযোগ। গুলিতে জখম হন সন্দেশখালি থানার এক পুলিশ অফিসার। প্রাণ হারান বিশ্বজিৎ মাইতি নামে এক ভিলেজ পুলিশ। মূল অভিযুক্তেরা ওই বাহিনীর বলে বিরোধীদের দাবি। আজও কেউ ধরা পড়েনি। পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও এই বাহিনীর দাপট দেখেছেন গ্রামবাসী। বিরোধীরা মনোনয়নপত্র পেশ করতে ব্লক অফিস পর্যন্ত যেতে পারেননি। রাস্তায় বাহিনী তাঁদের বাধা দেয় বলে অভিযোগ। বিজেপি প্রার্থীরা কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশে বিশেষ ভাবে মনোনয়ন জমা নেওয়ার বন্দোবস্ত হয় বসিরহাট মহকুমাশাসকের দফতরে।

সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে পুলিশ প্রশাসন শেষ কথা বলে না। বলে শাহজাহান ও তাঁর বাহিনী। এখানকার মানুষ অতিষ্ঠ এই বাহিনীর দাপটে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ন্যাজাটের এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘এমন কোনও দুষ্কর্ম নেই যা শাহজাহান বাহিনীকে দিয়ে করায় না। পুলিশ প্রশাসন সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ করে না।’’

সবাই বাহিনী নিয়ে আতঙ্কের কথা বললেও সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, ‘‘কোনও বাহিনীই নেই শাহজাহানের। সন্দেশখালির মানুষ ওঁকে ভালবাসেন। তাই ওঁর সঙ্গে থাকেন। বিরোধীদের জনসমর্থন নেই। তাই কুৎসা করে। ভিত্তিহীন অভিযোগ সব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement