ফাইল চিত্র।
এ যেন অকাল বোধনেরও অকাল বোধন! দুর্গাপুজোর দেরি আছে। বৃহস্পতিবার সকালে বায়নার ফোন পেয়ে চমকে যান ছত্রী ঢাকি পাড়ার শিল্পীরা। এখন কী পুজো যে, ঢাকে বোল তুলতে হবে!
জবাব মেলে ফোনেই। বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হয়েছেন। এগরা শহরে বাম ছাত্র-যুবরা তাই মিছিল করবেন। অনুব্রত তো চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর নিদান হেঁকেছিলেন। সে কথা মনে করাতেই মিছিলে থাকবে ঢাকের বাদ্যি।
কেষ্টর-কল্যাণে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের অনেক ঢাকি মহল্লাতেই বর্ষাতেই আচমকা শরতের আলো। পুজোর মরসুমের অনেকটা আগে ঘন ঘন ডাক পড়ছে ঢাকিদের। বাম বা বিজেপির মিছিলে কয়েক ঘণ্টা বাদ্যি বাজিয়ে রোজগারও মন্দ হচ্ছে না।
দু’বছর করোনা অতিমারিতে নমো নমো করে পুজো হয়েছে অনেক জায়গায়। কাটছাঁটের তালিকায় পড়ে গিয়েছেন ঢাকিরা। তলানিতে ঠেকেছে রোজগার। এ বার দুর্গাপুজোয় ছবিটা বদলাবে, আশা ছিলই। তবে অসময়ের এই বরাতের জন্য তৈরি ছিলেন না কেউই। এগরার বাম যুব নেতা সৌম্য দাসের কটাক্ষ, ‘‘অন্তত ঢাকিদের ক্ষেত্রে কেষ্টই সহায়।’’ তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দাস পাল্টা বলছেন, ‘‘বিরোধীরা উচ্ছ্বাসে ঢাক বাজিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এই চক্রান্ত বিফলে যাবে।’’
ঢাকিরা অবশ্য আপাতত সুফল পাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধিক মিছিলে ঢাক বাজিয়েছেন ছত্রী পাড়ার নিমাই গুছাইত, তপু গুছাইতরা। কোনওটা বামেদের, কোনওটা বিজেপির। শুক্রবার পথে নেমেছিলেন ভগবানপুরের নিমতলার হরিজন পল্লির ঢাকিরাও। কাজলাগড়ে বামেদের ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ মিছিলে ছিল তাঁদের ঢাকের বাদ্যি। রোজগারও হয়েছে ভালই। পুজোর মরসুমে একদিনে ঢাক বাজিয়ে মেলে ৮০০ থেকে হাজার টাকা। আর এখন মিছিলে ঘন্টা দুয়েক ঢাক বাজিয়েই হাতে হাতে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। ছত্রীর ঢাকি নির্মল গুছাইত হাসিমুখে জানালেন, ‘‘প্রথমে তো বুঝতেই পারিনি এখন কিসের ডাক। পরে বুঝলাম অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ায় চড়াম চড়াম ঢাক বাজাতে হবে। অসময়ে উপরি রোজগারে আমাদের ভালই হল।’’
ঢাক নিয়ে মিছিল হবে জানিয়ে ফোন এসেছে ‘ঢাকিদের গ্রাম’ বলে পরিচিত জলপাইগুড়ির দোমোহানি, টেকাটুলি, পানবাড়ির ঢাকিদের কাছেও। এই ‘বায়না’ একেবারেই অপ্রত্যাশিত বলে জানালেন গোপাল ঋষি। তিনি বলেন, “সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজো থেকে আমাদের পুজোর বায়না হয়। কিন্তু এ বার তার আগেই মিছিলে ডাক পড়ছে। সংখ্যায় হয়তো খুবই কম। কিন্তু দু’পয়সা রোজগার তো হচ্ছে।”