ফিরেছে ইন্টারনেট পরিষেবা। মোটের উপরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হাওড়ার শ্যামপুরের থমথমে ভাবটা কাটেনি মঙ্গলবারেও। এই থানা এলাকার কিছু কিছু উত্তেজনাপ্রবণ অংশে ১৬৩ ধারা এ দিনও বলবৎ ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে সোমবার রাতে নতুন করে গোলমাল হয় পাশের থানা এলাকা বাউড়িয়ায়। পুলিশ সূত্রে দাবি, দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
তবে, শুধু শ্যামপুর বা বাউড়িয়াই নয়, বার বার নানা অশান্তির পিছনে পুলিশের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছে বিভিন্ন মহল। তৃণমূলস্তরে পুলিশের কার্যত কোনও ‘সোর্স’ নেই বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে কোথাও কোনও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র নেওয়া হচ্ছে কি না, তা আগাম খবর পেতে ‘ব্যর্থ’ হচ্ছে পুলিশ। গোলমাল বড় আকার নিলে তাই অনেক ক্ষেত্রে পুলিশও আক্রান্ত হচ্ছে। এই দুর্বলতা হাওড়ায় আটকে নেই। পুজোর ঠিক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক বালিকা খুন হওয়ার পরে গ্রামবাসীরা স্থানীয় ফাঁড়িতে হামলা চালান। কলকাতার বাঁশদ্রোণীতে এক স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যুর পরেও স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়ে পুলিশ।
গত রবিবার শ্যামপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বড় আকার নিয়েছিল। পরে জনতা থানায় চড়াও হয়ে বোমা ছোড়ে, প্রচুর দোকান এবং একটি ক্লাবে ভাঙচুর চালায়। সোমবার বাউড়িয়াতেও দু’পক্ষের সংঘর্ষ, ইট নিয়ে হামলা, এলাকার দোকানগুলিতে ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। কয়েক মাস আগেও ওই একই জায়গায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছিল।
হাওড়া জেলা পুলিশকর্তারা অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। জেলার এক পুলিশকর্তার দাবি, ‘‘গোলমালের খবর পাওয়ামাত্র শ্যামপুর ও বাউড়িয়ায় পুলিশ গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করে।’’ অবশ্য একই সঙ্গে ওই পুলিশকর্তা মানছেন, ‘‘শ্যামপুরের ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ জনতা থানায় স্মারকলিপি জমা দেবে বলে এসেছিল। তারা যে হামলা করতে পারে, তা আন্দাজ করা যায়নি।’’
শ্যামপুরে ঘটনার রাতেই চলে আসেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার-সহ রাজ্য ও জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। সোমবার রাত পর্যন্ত ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাগনান ১ এবং উলুবেড়িয়া ১ ব্লক এলাকাতেও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, পুজো বা বড় উৎসবের আগে থানায় সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু শ্যামপুরে তা হচ্ছে না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘একটা সময়ে ওই থানায় দুর্গাপুজো, কালীপুজো-সহ বিভিন্ন বড় উৎসবের আগে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হত। তিন-চার বছর ধরে তা বন্ধ। রাজনৈতিক দলগুলি পুলিশকে অনেক খবর দিত। সেটা আর হয় না।’’ মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। পুলিশ অনেক আগেই তাঁকে আটকে দেয়। শুভঙ্করও প্রশ্ন তোলেন, ‘‘গোয়েন্দা দফতর কেন আগে থেকে জানতে পারল না বিষয়টি? তারা কি দুর্বল? পুজোর আগে সর্বদল বৈঠক কেন ডাকা হল না? ব্লক স্তর পর্যন্ত সর্বদল বৈঠক ডেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।” একই দাবি করেন বিজেপি নেতা রমেশ সাধুখাঁ এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অসিতবরণ সাউ।
রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যা করণীয়, সেটাই পুলিশকে করতে বলা হয়েছে।’’