— ফাইল চিত্র
বেশ কিছু দিন ধরেই ছাত্রছাত্রীর অভাবে রাজ্যের অনেক সরকারি স্কুলের উদ্বেগ বাড়ছে। অতিমারির মধ্যে সেখানে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানোর আগ্রহ বা তাগিদ কি কিছুটা বাড়ছে? সরকারি স্কুল, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল, সরকার পোষিত স্কুলে ভর্তির যে-প্রক্রিয়া চলছে, তার ছবি থেকেই এই আশা-জাগানো প্রশ্নটি উঠে আসছে। কিছু সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য, এ বার পড়ুয়া ভর্তিতে কোথাও যেন একটা সোনালি রেখা দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা।
ইদানীং অভিভাবকদের মধ্যে সরকারি স্কুলের বদলে একটু বেশি খরচ দিয়ে বেসরকারি স্কুলেই ছেলে বা মেয়েকে ভর্তি করার প্রবণতা বেশি। বেসরকারি স্কুলের রমরমায় অনেক শতাব্দী-প্রাচীন স্কুলে পড়ুয়া কমে গিয়েছে। করোনাই কারণ কি না, সেই প্রশ্নের মধ্যেই সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, এই বছরটা যেন কিছু ব্যতিক্রম। সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এ বার তাঁদের স্কুলে ভর্তিতে অন্যান্য বারের থেকে ভাল সাড়া মিলেছে। এমনটাও দেখা যাচ্ছে যে, কিছু কিছু অভিভাবক ছেলেমেয়েকে বেসরকারি ইংরেজি স্কুল থেকে সরিয়ে এনে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছেন। ‘‘আমার এক ছেলে আর মেয়ে দমদমের একটি বেসরকারি ইংরেজি স্কুলে পড়ত। করোনার জেরে আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই স্কুলে ওদের আর পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ছেলেকে হেয়ার স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি,’’ বললেন নামে দমদমের বাসিন্দা শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায়।
অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর তাঁদের স্কুলে ভর্তি ভাল হচ্ছে বলে জানান হেয়ার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই ১৫০ জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা, করোনায় আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ায় অনেকে বাচ্চাদের বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর খরচ আর বহন করতে পারছেন না। কেউ কেউ ভাল সরকারি স্কুলে নিখরচায় পড়াতে চাইছেন। তাই অভিমুখ হয়তো কিছুটা ঘুরছে।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় সংস্থা সায় দিলে পিয়ারলেসে পরীক্ষা রুশ টিকার
আরও পড়ুন: ট্যাব কিনতে টাকা দেবে সরকার
সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাক্-প্রাথমিকে ৫০ জন ভর্তি নেওয়ার কথা। প্রায় সব আসনই ভর্তি হয়ে গিয়েছে। অভিভাবকদের আশঙ্কা, এখন হয়তো কলকাতা হাইকোর্টের চাপে বেসরকারি স্কুলগুলি ফি কমিয়েছে। কিন্তু পরে, সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে আবার ফি অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেবে না তো? তাই অনেকেই ছেলে বা মেয়েকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছেন।’’
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী অবশ্য জানান, তাঁদের স্কুলে ভর্তির চাহিদা সব সময়েই বেশি। ‘‘তবে এ বার প্রাক্-প্রাথমিকে ভর্তির আগ্রহ অনেকটাই বেশি। করোনার কারণে এই অতিরিক্ত ভর্তি হলেও হতে পারে,’’ বলেন শাশ্বতীদেবী। সাখাওয়াত মেমোরিয়ালের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহ নাগ মহাপাত্র জানান, এ বার তাঁদের স্কুলের প্রায় সব শ্রেণিতেই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়ারা ভর্তি হয়েছে।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানান, তাঁদের স্কুলে বেসরকারি স্কুল থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছিল। ‘‘আর্থিক কারণে কেউ সরকারি স্কুলে ভর্তি হলে সেটা এক দিকে ভাল ঠিকই। কিন্তু পড়াশোনার মান ভাল না-হলে আবার কিন্তু বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে সরকারি স্কুল,’’ বলেন শুভ্রজিৎবাবু। তাঁর বক্তব্য, যখন নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে সরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের ভর্তি হওয়ার প্রবণতা বাড়বে, তখন বোঝা যাবে, সরকারি স্কুলের উপরে ভরসা বাড়ছে মানুষের।
‘‘করোনা আবহে সরকারি স্কুলে ভর্তি বেড়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষা দফতরের তরফে সরকারি স্কুলগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া দরকার। তা হলেই সরকারি স্কুলের উপরে সামগ্রিক ভাবে আস্থা বাড়বে মানুষের,’’ বলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু।