গুলি উড়ে এল বিস্ময়ের মতো!

পদ্মার বুকে ভেসে ভেসে নদী-ভূগোল নিজের মনেই এঁকেছেন আফরার মিঞা। বলছেন, ‘‘পদ্মা যেন কেমন ঢালু, এক দিকে হেলে রয়েছে!’’

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫৫
Share:

পদ্মাপাড়ে ভিড় করেছেন গ্রামের লোকজন। বৃহস্পতিবার কাকমারি চরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

নদী কখনও ‘সটান’ বয় না।

Advertisement

পদ্মার বুকে ভেসে ভেসে নদী-ভূগোল নিজের মনেই এঁকেছেন আফরার মিঞা। বলছেন, ‘‘পদ্মা যেন কেমন ঢালু, এক দিকে হেলে রয়েছে!’’

কথাটা যে ভুল নয়, নদী বিশেষজ্ঞদের গভীর পাণ্ডিত্যও সে কথা কবুল করে নিয়েছে। নদীর এই কাত হওয়া পথেই ইলিশের আনাগোনা। বাংলাদেশের রাজশাহী সেই ঢালু পাড়ের কোল ঘেঁষে।

Advertisement

প্রতি বছর পদ্মায় রুপোলি শস্যের হুটোপুটি শুরু হলেই বাংলাদেশের কোল বরাবর তার বোলবোলাও। এ দেশের পাড় বরাবর গ্রামের পর গ্রাম কিংবা আচমকা জেগে ওঠা চরের বাসিন্দারা তাকিয়ে থাকেন সেই ইলিশের দিকে। বর্ষা ফুরিয়ে হেমন্তের গোড়ায় বাংলাদেশ তাদের নদী-জাল শিথিল করলে ইলিশ উজিয়ে এ পাড়ে আসে। তখন ছোট ছোট নৌকায় ছয়লাপ হয়ে যায় পদ্মা।

বৃহস্পতিবারের ঘটনাও তেমনই এক শিথিলতার নিরিখে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বলছেন, ‘‘দিন কয়েক ধরে বাংলাদেশ সরকার তাদের জাল শিথিল করায় ও পাড়ের মাছ এ পাড়ের দিকেও ঘেঁষছিল। আর তা ধরতেই চরের মাঝিরা ভেসে পড়েছিলেন নদীতে।’’ তবে নদীর জলরেখায় সীমানা খেয়াল থাকে না। কখনও ও পাড়ের গফুর মিঞা এ পাড়ের নদীতে জাল ফেলেন, এ পাড়ের বিকাশ মণ্ডল জাল ছুড়ে দেন ও পাড়ের সীমানায়।

তা নিয়ে দু’পক্ষের বচসা-বিদ্ধেষ বেশি দূর গড়ায়নি কখনও। প্রচ্ছন্ন সতর্ক করার মধ্যেই নিজের সীমানায় ফের পিরে যান পরস্পর। বিকাশ মণ্ডল বলছেন, ‘‘নিয়ম তো ভাঙিনি, বিএসএফের এঁকে দেওয়া সীমানা ধরেই মাছ ধরছিলাম।’’ প্রবীণ এক মৎস্যজীবী বলছেন, ‘‘আসলে কি জানেন, বিসএফও তেমন নির্দিষ্ট করে সীমারেখা টানতে পারে না। জলে কি আর সীমানা টানা যায়। তবে এই অলিখিত ভুলচুক নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তেমন কোনও উষ্মাপ্রকাশ ছিল না কখনও।’’ তা যে এমন গোলা-বারুদের লড়াইয়ে দাঁড়াবে ভাবতেই পারেননি মৎস্যজীবীরা।

কাকমারি বিওপি’র ১১৭ নম্বর ব্যাটালিয়নের এক অফিসার বলছেন, ‘‘এমন ঘটনা তো কখনও ঘটেনি, আমরা তাই একটু হকচকিয়েই গিয়েছিলাম।’’ গুলিতে আহত বিএসএফ জওয়ান রাজবীর সিং যাদবও হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বলছেন, ‘‘ওরা (বিজিবি) আমাদের লক্ষ্য করে কেন যে বিনা প্ররোচনায় গুলি চালাতে শুরু করল, বুঝতেই পারিনি। আমি তো গুলি লাগার পরে বুঝলাম, ওরা আক্রমণ করেছে!’’

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘বিজিবি’র গুলিতে মারা গিয়েছেন বিএসএফ জওয়ান, এমনটা এই প্রথম দেখলাম। প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি।’’ জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাও বলেন, ‘‘বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে দেখলাম। ওখানে কী ঘটেছে তা জানি না। এটা অভিপ্রেত ছিল না।’’

এ দিন ওই গুলি-কাণ্ডের পরে বিএসএফ মহলে অস্থিরতা দেখা গেলেও তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন বেশি। এক জওয়ানের কথায়, ‘‘এত দিন এই ব্যটালিয়নে আছি। শান্ত সীমান্ত। এমন তো ভাবতেই পারিনি।’’

অবাক মৎস্যজীবীরাও। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘এর পরে পদ্মায় নামার সাহস দেখাব কী করে!’’

সাগরপাড়ার মৎস্যজীবী ছোটন হালদার বলছেন, ‘‘একে বিএসএফের নানা ফতোয়া, তবুও সব উজিয়ে জলে নামছিলাম, এখন দেখছি সেখানেও বিপদ। ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির— আমরা যাই কোথায় বলুন তো!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement