শ্যামনগর স্টেশন। শেষ ট্রেন বাতিল থাকায় অনেক যাত্রীই ভোরের প্রথম ট্রেনে এ ভাবে বাড়ি ফেরেন। —ফাইল চিত্র।
রাতের শেষ রানাঘাট লোকাল শিয়ালদহ থেকে ছাড়ত ১১টা ৫০ মিনিটে। ছাড়ত, কারণ গত পাঁচ দিন ধরে সেই ট্রেন আর ছাড়ছে না। রানাঘাট স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিংয়ে জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তাই ওই ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এমনটা চলবে আরও কয়েক দিন। কিন্তু কলকাতা থেকে শহরতলির একটা বড় অংশে ফেরার একমাত্র ভরসা এই ‘লাস্ট ট্রেন’। সেই ট্রেন বাতিল হওয়ায় চূড়ান্ত হয়রান হতে হচ্ছে রাতের যাত্রীদের। রেল যদিও বলছে, তারা আগে থেকে জানিয়েই ওই ট্রেন বাতিল করেছে। যাত্রীদের বক্তব্য, ‘লাস্ট ট্রেন’ বাতিল করার বিষয়ে রেলের আরও ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন ছিল। কারণ, ওটাই ঘরে ফেরার ‘লাস্ট’ অবলম্বন।
এখানেই শেষ নয়। রাত সাড়ে ১১টায় একটি লালগোলা প্যাসেঞ্জার ছাড়ত শিয়ালদহ থেকে। এই কাজের জন্য সেটি এখন রাত ১টায় ছাড়ছে। যাত্রীদের একাংশের দাবি, রেলের তরফে বিভিন্ন স্টেশনে ঘোষণা করা হয়েছিল, রাতের ওই লালগোলা প্যাসেঞ্জার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব স্টেশনে দাঁড়াবে। কিন্তু সেই ‘ঘোষণা’ও কার্যকর হয়নি। কারণ অন্য সময়ে শিয়ালদহের পর সেই ট্রেন দমদম, ব্যারাকপুর এবং নৈহাটিতে দাঁড়ায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার সব স্টেশনেও দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু ওই ট্রেনটি সব স্টেশনে নয়, আগের মতোই নির্দিষ্ট স্টেশনে দাঁড়াচ্ছে। ফলে শিয়ালদহ মেন শাখার যাত্রীদের দুর্ভোগ চূড়ান্ত অবস্থায় গিয়েছে।
রেলের যদিও দাবি, তারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আগেই জানিয়েছিল, ১৫ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। গত ১৪ জুন পূর্ব রেলের তরফে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, রানাঘাট স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিংয়ের উপর জাতীয় সড়কের চার লেনের নির্মাণকাজ হবে। সে জন্য ১৫ জুন থেকে ২২ জুন রাত ১২টা ৪০ মিনিট থেকে রাত ৩টে ১০ মিনিট পর্যন্ত শিয়ালদহ-রানাঘাট শাখায় ‘ট্রাফিক এবং পাওয়ার ব্লক’ করা হবে। অর্থাৎ, ওই সময়ের মধ্যে ওই শাখায় কোনও ট্রেন চলবে না। একই কারণে শেষ আপ রানাঘাট লোকালও বাতিল করা হয়। রেলের তরফে আরও জানানো হয়, শিয়ালদহ-লালগোলা এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ১১টার বদলে এই ক’দিন রাত ১টায় ছাড়বে।
মধ্য কলকাতার একটি রেস্তরাঁয় কাজ করেন শ্যামনগরের বাসিন্দা অপূর্ব চক্রবর্তী। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি রাতের শেষ ট্রেনেই বাড়ি ফেরেন। অপূর্ব বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই আমি শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরি। কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে কাজের অজুহাতে রেল যাত্রীদের সঙ্গে যা করছে, সেটা চূড়ান্ত অমানবিক। আমি এখন লালগোলা প্যাসেঞ্জারে করে নৈহাটি গিয়ে নামি। তার পর দেড়শো টাকার শেয়ার টোটোয় বাড়ি ফিরছি।’’
হালিশহরের বাসিন্দা মুকুল দত্তও প্রতি দিন শেষ ট্রেনে বাড়ি ফেরেন। তিনি দমদমের একটি ব্যাটারি কারখানায় কাজ করেন। মুকুলের অভিযোগ, ‘‘গত বৃহস্পতিবার থেকে লাস্ট ট্রেন বাতিল। মধ্যরাতের লালগোলা প্যাসেঞ্জার প্রথম দিন সমস্ত স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর দাঁড়াচ্ছে না। ফলে নৈহাটি নেমে অপেক্ষা করি প্রথম ট্রেনের। সেটায় বাড়ি যাই। সারা রাত জেগে থাকতে হচ্ছে রেলের বাজে সিদ্ধান্তের জন্য।’’
রেল যদিও বলছে, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়ে গেলেই রাতের শেষ রানাঘাট লোকাল আবার চলবে। কিন্তু রানাঘাট যাওয়ার শেষ লোকাল নিয়ে যাত্রীদের দীর্ঘ দিনের অন্য অভিযোগও রয়েছে। তাঁদের দাবি, শেষ রানাঘাট লোকাল একটি মেমু রেককে করা হয়। লালগোলা থেকে যে রেকটি শিয়ালদহ আসে, সেটিই আপ রানাঘাট লোকাল হিসাবে রওনা দেয় রাত ১১টা ৫০-এ। অনেক সময়ই লালগোলা প্যাসেঞ্জার শিয়ালদহ পৌঁছতে দেরি করে। তার ফলে শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট যাওয়ার শেষ লোকাল ছাড়তে দেরি করে। যাত্রীরা এ নিয়ে বহু বার শিয়ালদহের স্টেশন মাস্টারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘শেষ ট্রেন না থাকলে যাত্রীদের সমস্যা হয়, সেটা আমরাও জানি-বুঝি। কয়েক দিন শিয়ালদহ মেন সেকশনের যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে বলে রেল ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে আরও ভাল পরিষেবা দিতে গেলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজের খুবই প্রয়োজন। সে কারণে অনেক সময় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’’