Congress

ক্ষোভে ইস্তফা, কংগ্রেসের অন্দরেও দাবি ‘বিচার চাই’

দলীয় সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রানা রায়চৌধুরী। তাঁর ক্ষোভের সঙ্গে একমত হয়ে পদত্যাগের চিঠি পাঠিয়েছেন উত্তর কলকাতার একাধিক পদাধিকারী ও ব্লক সভাপতি।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৪
Share:

সে দিন শ্যামবাজারের সভায় অধীর চৌধুরী ও রানা রায়চৌধুরী। —ফাইল ছবি।

সাংগঠনিক পালাবদল এখনও বকেয়া। প্রদেশ কংগ্রেসের কমিটিতে প্রয়োজনীয় রদবদল করার যাবতীয় দায়িত্ব প্রথা মেনে আগেই এআইসিসি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস হাই কম্যান্ড এখনও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এরই মধ্যে ‘বিচার চাই’ দাবি উঠে গেল কংগ্রেসের অন্দরেও! তার সঙ্গে জড়িয়ে গেল আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদও।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রানা রায়চৌধুরী। তাঁর ক্ষোভের সঙ্গে একমত হয়ে পদত্যাগের চিঠি পাঠিয়েছেন উত্তর কলকাতার একাধিক পদাধিকারী ও ব্লক সভাপতি। প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধান ভবনে দলের হাতে গোনা যাঁরা এখনও প্রায় নিয়মিত যান, উত্তর কলকাতার বর্ষীয়ান নেতা রানা ছিলেন তার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের কাজকর্ম যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁদেরই একাংশের ভূমিকায় এখন ক্ষুব্ধ তিনি। বিশেষত, গত ২৯ অগস্ট কলেজ স্কোয়ার থেকে দলের মিছিল শেষে শ্যামবাজারের সভায় মাইক বদলে দিতে গেলে রানাকে যে ভাবে ‘ধমক’ দিয়ে সরে যেতে বলেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, তাতে ‘অপমানিত ও ব্যথিত’ হয়ে তিনি আর পদে থাকতে নারাজ। সেই কারণেই শনিবার আর জি কর হাসপাতালে অধীরের সফরে রানা সঙ্গী হননি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর অবশ্য বলছেন, ‘‘এত বড় মিছিলের পরে শ্যামবাজারে সে দিন উত্তেজিত ছিলাম। মাইকটা গন্ডগোল করছিল। বারবার যাঁরা সামনে চলে আসছিলেন, তাঁদের সরে যেতে বলেছিলাম। অসম্মান করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। আমি বলেছি, রানাবাবু যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি ওঁর কাছে দুঃখপ্রকাশ করতে রাজি।’’ প্রদেশ সভাপতির মতে, ওই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে দলের একাংশ অহেতুক ‘জটিলতা’ তৈরি করছে।

Advertisement

সমস্যার সূত্রপাত অবশ্য আরও আগে। শ্যামবাজারের ঘটনার কিছু দিন আগেই দলের হোয়াটস্‌অ্যাপ গ্রুপে সতীর্থদের জানিয়ে উত্তর কলকাতার সভাপতি রানা ইস্তফা দিয়েছিলেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রদেশ কংগ্রেসের কিছু পদাধিকারীর আচরণই তাঁর এমন সিদ্ধান্তের কারণ। এর পরে প্রদেশ সভাপতি অধীর তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরে খানিকটা পুনর্বিবেচনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আগুনে ফের ঘি পড়ে শ্যামবাজারের ঘটনায়! প্রদেশ সভাপতি উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতিকে ‘সরে যান’ বলছেন, সেই ঘটনার ভিডিয়ো প্রচার করে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির অনেক নেতাও।

‘অপমানিত’ রানা শনিবার অধীরের সঙ্গে আর জি করে (উত্তর কলকাতা জেলার এলাকায়) যাননি, এই নিয়ে মুখও খুলতে চাননি। তবে দলের নেতা তাপস সিংহ, স্বরূপ বসু, অজয় গুপ্তেরা নানা ভাবে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ব্লক সভাপতিদের ইস্তফার পাশাপাশি উত্তর কলকাতার নেতা-কর্মীদের একাংশ প্রদেশ কংগ্রেসের কিছু পদাধিকারীর সব জেলায় ঢুকে ‘মৌরসি পাট্টা’ চালানোর বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমেও লিখতে শুরু করেছেন। এই বিষয়ে উত্তর কলকাতা জেলা থেকে আর এক প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক ও মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘রানাদা’র সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। এই মানসিক দুর্যোগে আমি সমব্যথী।’’

যদিও অধীরের বক্তব্য, ‘‘উত্তর কলকাতার সভাপতি আগেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। আমি কথা বলে ওঁকে বুঝিয়েছিলাম। তার পরে আবার একটা ঘটনাকে সামনে রেখে একটা জট পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ তবে দলেরই একাংশের মতে, প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (পিসিসি) এখন অস্তিত্ব নেই। জেলা কমিটিগুলিও কাজ চালালোর জন্য আছে। নতুন পিসিসি হলে জেলা নেতৃত্বেও পুনর্গঠন হবে। এই অবস্থায় ক্ষোভ-বিদ্রোহের ‘মূল্য’ কত, তা নিয়েই প্রশ্ন আছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement