ছবি পিটিআই।
তিনি ‘পরমাত্মীয়’।
তাই গ্রেফতারের চরম মুহূর্তে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর নামটাই বলেছিলেন বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রের। এবং সেই কারণেই মন্ত্রীর ‘অ্যারেস্ট মেমো’য় তাঁরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লিখেছেন বলে দাবি ইডি কর্তাদের।
ইডি সূত্রের দাবি, শুক্রবার ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১টা ৩০। নাকতলার বাড়ির দোতলার ঘরে পার্থকে ঘিরে বসে ইডি-র তদন্তকারীরা। ঘণ্টা চারেক আগে দিল্লি থেকে এসেছেন ইডি-র এক শীর্ষ কর্তা। দিল্লি থেকে ফোনে নির্দেশ আসে, গ্রেফতার করতে হবে মন্ত্রীকে। নিয়মমাফিক পার্থকে জানানো হয়, গ্রেফতারের প্রাক-মুহূর্তে কোনও এক নিকটাত্মীয়কে ফোন করে ঘটনাটি জানাতে হবে। ইডি সূত্রের দাবি অনুযায়ী, পার্থ জানান, স্ত্রী প্রয়াত। মেয়ে বিদেশে। ফোনে পাওয়া মুশকিল। দাদা আছেন। কিন্তু অত রাতে তাঁর ঘুম ভাঙানো মুশকিল।
তবে? ইডি সূত্রের দাবি, পার্থ তখন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নাম করলে কিছুটা অবাক হয়ে ইডি অফিসারেরা জানতে চান, ‘আপনি কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলছেন?’ পার্থ মাথা নাড়াতে ইডি-র কর্তা প্রশ্ন করেন, ‘এখন গভীর রাত। অনারেবল সিএম কি এখন আপনার ফোন ধরবেন?’ ইডি সূত্রের দাবি, জবাবে পার্থ বলেন, ‘‘যত রাতই হোক না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার ফোন ধরবেন।’’ কিন্তু, কেন মুখ্যমন্ত্রী? ইডি সূত্রের দাবি, তখনই পার্থ জানান, মমতা তাঁর ‘পরমাত্মীয়’। তাই তাঁকেই বিষয়টি জানাতে চান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইডি কর্তা বাংলা শব্দটি বুঝতে না পেরে বাঙালি অফিসারকে তার অর্থ জিজ্ঞেস করেন।
তারপরেই পার্থকে ফোন করতে বলা হয়। এক ঘণ্টার মধ্যে পার্থ বার তিনেক ফোন করলেও সেই ফোন মুখ্যমন্ত্রী ধরেননি বলে দাবি তদন্তকারীদের। তদন্তকারীদের দাবি, রাত ১টা ৫৫ মিনিটে পার্থবাবু নিজের মোবাইল থেকে মমতার মোবাইলে ফোন করেন। রাত ২টা ১০ নাগাদ পার্থকে গ্রেফতার করা হয়। ইডির এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘গভীর রাত হলেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ফোন ধরবেন বলে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু প্রায় কুড়ি সেকেন্ড মুখ্যমন্ত্রীর ফোন বেজে গিয়েছিল। তারপরেই পার্থ কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন।’’ তারপরে নিজের দাদা ও আইনজীবীকে ফোন করেন পার্থ। ফোন-পর্বের পর পাশের ঘরে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য চলে যান পার্থ। তাঁর মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা।
ইডি-র দাবি, যেহেতু গ্রেফতারের খবর শুনে তিনি প্রথমে তা মমতাকেই জানাতে চান, তাই নিয়ম মেনে অ্যারেস্ট মেমো-তে মুখ্যমন্ত্রীর নামই রাখা হয়েছে। যদিও এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে। যদিও ইডি-র অ্যারেস্ট মেমো অনুযায়ী, রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর আগে আর একবার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেন পার্থ। কিন্তু, সে বারেও ফোন বেজে যায় বলে অ্যারেস্ট মেমো-তে জানানো হয়েছে। শনিবার সকালে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে পার্থও জানান, তিনি নেত্রীকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।