পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
জামিন চেয়ে এ বার আদালতে নতুন যুক্তি দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিচারককে তাঁর আইনজীবী বললেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জামিনের বিরোধিতা করে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা তো আসলে সরকারেরই সিদ্ধান্ত। তা হলে পার্থের জামিন আটকাচ্ছে কেন?
শুক্রবার পার্থের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল নিম্ন আদালতে। আদালতে পার্থের জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই বলেছিল, ‘‘নিয়মের বাইরে গিয়ে বার বার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়াদ বাড়িয়েছেন পার্থ। এই কল্যাণময়ও শিক্ষক নিয়োগ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত। তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি কেন করা হয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। আর যে হেতু শিক্ষা দফতরের সমস্ত বিষয় পার্থের নখদর্পণে ছিল, তাই উনি দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।’’ সিবিআইয়ের এই যুক্তিরই পাল্টা পার্থ আদালতে বলেছেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা কল্যাণময় বলে নয়। শিক্ষকদের বয়স ৬০ থেকে ৬২ এবং পরবর্তী কালে ৬৫ করার সিদ্ধান্ত সরকারই নিয়েছিল।’’ অর্থাৎ তাঁকে যে যুক্তিতে দোষারোপ করা হচ্ছে, সেই একই কাজ সরকারও করেছে বলে জানিয়েছেন পার্থ। এই প্রথম নিজের ‘অসুস্থতা’ এবং ‘তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ না পাওয়া’র বাইরে নতুন কোনও যুক্তি দিলেন পার্থ। নিজেই তা জানালেন আদালতে।
শুক্রবার পার্থের হয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী। আদালতে পার্থের জামিনের পক্ষে তিনি বলেন, ‘‘পার্থের নাম বাগ কমিটির রিপোর্টে ছিল না। রিট পিটিশনেও ছিল না। তার পরও তিনি এক বছর ধরে হেফাজতে। অথচ ওই রিপোর্টে যাঁদের অভিযুক্ত হিসাবে দেখানো হয়েছে, তাঁদের ১৫-১৬ জনের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি তদন্তকারীরা সংস্থা।’’ আইনজীবী যুক্তি দেন, ‘‘একটা কমিটি যদি তদন্ত নিয়ে কোনও গাইডলাইন দেয়, এবং তাতে যদি হাই কোর্ট সিলমোহর দেয় তা হলে তদন্তকারী সংস্থার উচিত সেই গাইড লাইন মেনে চলা।” এর পরই পার্থ আত্মপক্ষ সমর্থনে সওয়াল করেন বিচারপতির কাছে।
পার্থের আইনজীবী বলছিলেন, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে কল্যাণময়ের মেয়াদ বৃদ্ধির অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু সেই সময় তো শুধু ওঁর মেয়াদ বৃদ্ধি হয়নি। আরও অনেকের হয়েছে। একটা নাম নিয়ে বদনাম করা যায়। জামিনের বিরোধিতা করা যায় না।’’ এর পরেই পার্থ বলেন, ‘‘শিক্ষকদের বয়স ৬০ থেকে ৬২, পরবর্তী কালে ৬৫ করার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছিল। উপাচার্যদের অবসরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৭০ করা হয়েছিল। বিভিন্ন বোর্ড এবং কমিশনেও একই হয়েছে।পুরোটাই সেই মেয়াদ বৃদ্ধির কারণেই হয়েছে।’’
বিচারক এই যুক্তি শোনার পর অবশ্য সিবিআইকেই প্রশ্ন করেছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে তিনি জানতে চান, ‘‘চার্জশিটে একাধিক নাম রয়েছে। এফআইআরেও এক ব্যক্তির নাম রয়েছে, যিনি ফেরার নন অথচ বাইরে আছেন। আপনারা চার্জশিটে থাকা কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, কয়েক জনকে ধরছেন। বাকিরা তো আকাশে উড়ছে!’’ বিচারপতির এই প্রশ্নে অবশ্য পাল্টা কোনও যুক্তি বা জবাব দেয়নি সিবিআই।