ফাইল চিত্র।
বিরোধীশূন্য বিধানসভায় বৃহস্পতিবার পাশ হল শিল্প ও স্বাস্থ্য বাজেট। বিরোধীদের অনুপস্থিতি নিয়ে খোঁচা দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমি কখনও ভাবনি, শিল্পের মতো বিষয়ের বাজেটে বিরোধীরা থাকবেন না এবং তৃণমূলের দুই বিধায়কের পরেই আমাকে জবাবি ভাষণ দিতে হবে! বিরোধীরা বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন এবং শিল্প নিয়ে হিসেব চান। অথচ, শিল্প বাজেট নিয়ে বিধানসভায় যখন আলোচনার সুযোগ এল, তখন তাঁরা সভায় অনুপস্থিত, বারান্দায় বসে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করছেন!”
বগটুই-কাণ্ড নিয়ে এ দিন বিধানসভায় আলোচনার অনুমতি না পাওয়ায় অধিবেশনে আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখিয়ে ওয়াক আউট করেন বিরোধী বিজেপির বিধায়করা। সেই প্রসঙ্গেই এই কটাক্ষ করেছেন শিল্পমন্ত্রী। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য বলেন, “নারী, শিশুর যেখানে দাম নেই, সেখানে ওই সব আলোচনা করে লাভ নেই। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হোক। আমরা একটা একটা করে প্রশ্ন করব। অপদার্থ ব্যর্থ পুলিশমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে। সভার ভিতরে কথা বলার পরিবেশ নেই, বাইরেও নেই। তাই ৩০ মিনিট ধরে আমাদের বিধায়করা বিক্ষোভ দেখিয়ে ওয়াক আউট করেছেন।”
তৃণমূল বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং অসিত মজুমদার শিল্প বাজেটের সমর্থনে বক্তৃতা করার পরে পার্থ জবাবি ভাষণে বলেন, “প্রথম দু’দফায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক ক্ষেত্র, অর্থাৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তা, পানীয় জল, গ্রাম ও নগরোন্নয়নে জোর দিয়েছিলেন। এ বার তাঁর প্রধান লক্ষ্য শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান। মুখ্যমন্ত্রী শিল্প সম্ভাবনার নানা দিক খতিয়ে দেখছেন, উপদেশ দিচ্ছেন, শিল্পকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে শিল্পায়ন এবং উন্নয়নের চেষ্টা করছেন।” এর পরেই রাজ্যের শিল্পোদ্যোগের খতিয়ান
দেন পার্থ। তিনি জানান, সরকারি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিল্প পার্ক গড়তে বহু প্রতিষ্ঠিত সংস্থা আসছে। খনি থেকে রাজস্ব ঠিকমতো আদায় করতে নীতি তৈরি হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির জন্যও পৃথক নীতি তৈরি হয়েছে। রঘুনাথপুরে জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী তৈরির জন্য ৬০০ একর জমি একটি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
মন্ত্রী আরও জানান, তাজপুর বন্দরের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ওই বন্দর তৈরি হলে গোটা এলাকার আর্থিক চিত্রই পাল্টে যাবে। ডেউচা পাচামিতে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। হলদিয়ায় ইমামি অ্যাগ্রো টেক ২০ একর জমিতে নতুন করে ৪২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই প্রসঙ্গে পার্থের খোঁচা, “বিরোধী দলনেতা সভায় থাকলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতাম, হলদিয়াকে অধিকারী নগরী বানিয়ে তার দফা রফা করল কে?”
করোনা আবহে রাজ্য সরকারের ভূমিকা এ দিন স্বাস্থ্য বাজেটের আলোচনায় সবিস্তার ব্যাখ্যা করেন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পরিবার, যারা অন্য কোনও স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুবিধা পায় না, তাদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় এনে পাঁচ লক্ষ টাকা বিমার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২.৩ কোটির বেশি পরিবার এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছে। ২৪.৮৫ লক্ষ মানুষ এর সুবিধে পেয়েছেন। ভেলোরের সিএমসি-তে স্বাস্থ্যসাথী
প্রকল্পের অধীনে এখনও পর্যন্ত ৭৬২০ জন রোগী ৮৭.৩৫ কোটি
টাকার চিকিৎসা পেয়েছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অবশ্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে সভার বাইরে বলেন, “স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চলে না। রাজ্যের ২০০ কোটি টাকা বকেয়া আছে ওই প্রকল্পে। নার্সিংহোম বলেছে, আর এই কার্ড চালাব না।”