গত সপ্তাহেই বিচারভবনে ইডির মামলা চলাকালীন আংটি নিয়ে বিচারকের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছিল পার্থকে। ফাইল চিত্র
এক সময়ে হাতের দশ আঙুলে অন্তত ৮টি আংটি থাকত। অধিকাংশই সোনায় বাঁধানো দামি পাথরের। অধুনা সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছিল দুইয়ে। দু’টিই রূপোয় বাঁধানো! সোমবার দেখা গেল সেই দু’টিও আর নেই। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে এখন শুধুই আংটির আড়ালে রোদে না পোড়া চামড়ার সাদা ছোপ।
গত সপ্তাহেই বিচারভবনে ইডির মামলা চলাকালীন আংটি নিয়ে বিচারকের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছিল পার্থকে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে হচ্ছিল শুনানি। ভিডিয়ো কনফারেন্সে আদালতে হাজির ছিলেন পার্থ। আদালত সূত্রে খবর, বিচারক পার্থকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, জেলে যে আংটি পরা যায় না, তা জানতেন না তিনি? জবাবে পার্থ আদালতকে বলেন, তাঁর হাতে দু’টিই আংটি রয়েছে এবং সেগুলি শারীরিক সুস্থতার জন্য পরেন তিনি। যদিও এর পর ইডির আইনজীবী পার্থকে আংটি নিয়ে ‘প্রভাবশালী’ কটাক্ষ করায় বিচারকের নির্দেশ শুনে হাতের ওই দু’টি আংটিও খুলে ফেলেছিলেন পার্থ। আদালত কক্ষে সেই আংটি-পর্বের পর সোমবার প্রথম প্রকাশ্যে এলেন পার্থ। দেখা গেল, শুধু আংটি নয়, আরও অনেক কিছুই নেই পার্থের হাতে।
শূন্য হাত নেড়ে এগিয়ে গেলেন পার্থ। নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত জুলাই মাসে গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয় তার মাস কয়েক পরে। গ্রেফতারির আগে পর্যন্ত পার্থের ১০টি আঙুলে ৮টি আংটি দেখা যেত। অধিকাংশই ধারণের। এমবিএ-র ছাত্র এবং একদা কর্পোরেট দুনিয়ার পেশাদার পার্থের এই আংটির সংখ্যা বেড়েছিল বিগত বেশ কয়েক বছরেই। এ ছাড়া ডান হাতে নানা রঙের সুতোর তাগা এবং বাঁ হাতে কালো ব্যান্ডের ঘড়ি থাকতই। গ্রেফতারির পরও সেই ঘড়ি এবং সুতোর তাগা হাতে বেঁধে বহু বার আদালতে হাজির হয়েছে পার্থ। সোমবার দেখা গেল আংটির সঙ্গে উধাও হয়েছে ঘড়িও। এমনকি, লাল-হলুদ সুতোর তাগাও নেই আর। শুধু দেখা যাচ্ছে সেই ঘড়ি, সুতো, আংটির নীচের অতীতের ফেলে যাওয়া সাদা দাগ।
সোমবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজিরা ছিল পার্থের। তাঁকে নিয়ে গাড়ি আদালত চত্বরে পৌঁছতেই সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। প্রশ্ন করা হয় আংটি নিয়েও। পার্থকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘‘পার্থদা, আংটি পরলেই প্রভাবশালী?’’ জবাবে অবশ্য কোনও কথা বলেননি পার্থ। মৃদু হেসেছেন এবং আংটিহীন শূন্য হাত নেড়ে এগিয়ে গিয়েছেন।