partha chatterjee

Partha Chatterjee: ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার’, অপসারণের পর মুখোশ নামিয়ে বললেন প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ

মন্ত্রিত্ব তো গিয়েইছে। দল থেকেও সাসপেন্ড হয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর দাবি, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ১৩:৪২
Share:

পার্থ হাসপাতাল ঢোকার আগে। নিজস্ব চিত্র।

মন্ত্রিত্ব তো গিয়েইছে। দল থেকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁকে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে যাবতীয় দলীয় পদ। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনাপ্রবাহের পর শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলে দিলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার! শুক্রবার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাঁকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইলচেয়ারে করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মুখের মাস্ক (মুখোশ) নামিয়ে পার্থ সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেন, ‘‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’’

Advertisement

পার্থের ওই মন্তব্য সংক্ষিপ্ত হলেও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, পার্থ কারও নাম করেননি। ফলে তিনি ‘ষড়যন্ত্র’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তার স্পষ্ট নয়। তিনি কি তাঁকে গ্রেফতারির কথা বোঝাতে চেয়েছেন? নাকি তিনি তাঁর সঙ্গে তৃণমূল যে ‘দূরত্ব’ রচনা করেছে, তার কথা বলতে চেয়েছেন? পার্থ তা স্পষ্ট করেননি। স্পষ্ট করেননি বলেই দ্রুত জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কাকে ‘দায়ী’ করতে চাইছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং তৃণমূলের প্রাক্তন পদাধিকারী!

পার্থ যে ভাবে মুখের মাস্ক নামিয়ে কথাটি বলেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, তিনি চেয়েছিলেন, যাতে উপস্থিত সকলে (সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা-সহ) তাঁর কথাটা শুনতে পান। সেই সূত্রেই বিরোধী শিবিরের একাংশের দাবি, পার্থ ‘মুখোশ’ নামিয়ে কথা বলছেন। অর্থাৎ, তিনি এর পর আর ‘রেখেঢেকে’ বা ‘আড়াল’ করে কিছু বলবেন না। অর্থাৎ, তিনি এর পর দলের আরও অন্য অনেকের নাম নিতে পারেন। বিশেষত, তিনি যখন ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব এনেই ফেলেছেন। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের দাবি, এই দুর্নীতির ‘পাপ’ পার্থ ঘাড়ে করে এনেছেন। তাঁকেই এর ‘দায়’ বহন করতে হবে। এখন প্যাঁচে পড়ে তিনি এই তত্ত্ব দিচ্ছেন। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘ষড়যন্ত্র হলে পাঁচ দিন পরে বলছেন কেন! ষড়যন্ত্র হলে তিনি আদালতে গিয়ে তা প্রমাণ করুন না হয়!’’

Advertisement

এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৩ জুলাই পার্থকে তাঁর নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য এসএসকেএম হয়ে ভুবনেশ্বর এমসেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পার্থকে। এই ক’দিনে তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি তিনি। তবে এটা বলেছিলেন যে, গ্রেফতার হওয়ার আগেপরে তিনি একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন। তিনি কোনও জবাব পাননি। ইডির দাবি অনুযায়ী, পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ (ইডির দাবি) অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের এক একটি ফ্ল্যাট থেকে যখন কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে, তখনও পার্থ কার্যত নিরুত্তরই ছিলেন। তবে তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, ‘‘কী কারণে?’’ যা থেকে মনে করা হচ্ছিল যে, পার্থ মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাইছেন না।

তবে তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বৃহস্পতিবার সকালেই সিদ্ধান্ত নেন পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর। সেই মতো রাজ্যপালকে বিষয়টি জানানো হয়। তার পর নবান্ন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেন, ‘‘পার্থ’দাকে আমি রিলিভ করে দিয়েছি। তাঁর দফতরগুলি আপাতত আমার হাতেই থাকবে। আমরা কঠোর দল!’’

দল যে ‘কঠোর’, তা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা জেনে যান পার্থ। যখন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকের পর ঘোষণা করেন, তদন্ত চলাকালীন পার্থ সাসপেন্ড থাকবে। অর্থাৎ, যতদিন না এই তদন্ত শেষ হবে, ততদিন পার্থ সাসপেন্ড থাকবেন। দলের মহাসচিব-সহ পাঁচটি পদ থেকেও তাঁকে সরানো হয়। সরানো হয় দলের মুখপত্রের সম্পাদকের পদ থেকেও। অভিষেক সরাসরিই বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। যে সমস্ত ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, (টাকা, গয়না উদ্ধারের) তা অস্বস্তিকর। সাধারণ মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছেন। আমরা সাধারণ মানুষকেই বেনিফিট অব ডাউট দিচ্ছি।’’

লক্ষ্যণীয়, তার পরেই পার্থ বললেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কারও নাম নেননি তিনি। তবে তিনি এ পরে কী বলেন, কার সম্পর্কে বলেন, তা জানতে সমস্ত মহলেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এখন দেখার, হাসপাতাল থেকে বেরোনোর মুখে পার্থ আরও কিছু বলেন কি না।

আরও পড়ুন:

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement