ফাইল চিত্র।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে থাকাকালীন অভিযুক্তকে নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা আছে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। এই অবস্থায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ইডি-র তরফে কোনও পোশাক দেওয়া হচ্ছে না।
২৩ জুলাই গ্রেফতারের সকালে পার্থের পরনে ছিল পাঞ্জাবি-পায়জামা, পায়ে স্নিকার জুতো। ২৪ জুলাই তাঁর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কয়েকটি পাঞ্জাবি-পায়জামা দিয়ে গেলেও পার্থ আদালত থেকে সরাসরি এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাওয়ায় তিনি তা পরতে পারেননি। কয়েক দিন একই পোশাকে থাকতে হয় তাঁকে। আত্মীয়ের পাঠানো পোশাক হাতে পান ভুবনেশ্বর থেকে ফিরে আসার পরে। গোটা চারেক পোশাক ঘুরিয়েফিরিয়ে পরছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। খাবারে তাঁর অনীহার কথা জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। বলছেন, হেফাজতে বিশেষ কিছুই খাচ্ছেন না উনি।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘পোশাকের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। শুধু পোশাক বদল হলে আমরা তা ধুয়ে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু নতুন পোশাক দিতে আইনি বাধা আছে। সে-ক্ষেত্রে আইনজীবী ও পরিবার কোনও পোশাক দিয়ে গেলে তা পরীক্ষা করে অভিযুক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’’
একই মামলায় কুবেরের ধন উদ্ধারের পরে পার্থের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও আছেন ইডি-র হেফাজতে। তাঁর আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অর্পিতার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আমার হাতে কয়েকটি পোশাক দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি তা তদন্তকারীদের দিয়েছি। রবিবার পর্যন্ত আর কোনও পোশাক আমাকে দেয়নি কেউ।’’ অর্পিতার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তাঁর আইনজীবী।
তদন্তকারীরা জানান, ভুবনেশ্বর এমসের চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী পার্থকে খাবার ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে নিয়ম মেনে। তবে বিভিন্ন খাদ্যের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করছেন তিনি। বিশেষ কিছু খাচ্ছেন না। শরীরে একটা অস্বস্তি আছে বলে জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে মাঝেমধ্যেই বলছেন। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘নিয়মনীতি মেনে খাবারের সব রকম বন্দোবস্তই করা হয়েছে। ওঁর ভারী চেহারা। তাই শৌচালয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে থাকছেন কয়েক জন কর্মী। কনফারেন্স হলের একাংশে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিলিং ফ্যান আছে। কনফারেন্স রুম থেকে শৌচালয় এবং অর্পিতার লক-আপ— সর্বত্র রয়েছে সিসি ক্যামেরার নজর।
তদন্তকারীরা জানান, অর্পিতার খাবারের বিষয়ে চিকিৎসকদের কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই তাঁকে সাধারণ খাবারই দেওয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ব্ল্যাক কফি ও নুড্লস খেতে চাইছেন তিনি। তবে ইডি-র আঞ্চলিক দফতর সিজিও কমপ্লেক্সের রান্না করা খাবারই দেওয়া হচ্ছে তাঁকে।
পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর ও সহযোগীদের নাকতলা এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। প্রাক্তন মন্ত্রীর আইনজীবী অনিন্দ্য রাউত বলেন, ‘‘আমি পার্থের মামলার দিকটা দেখছি। জামাকাপড়-সহ পোশাকের বিষয়টি তাঁর বাড়ির লোকেরা দেখছেন বলে শুনেছি।’’
পার্থ-ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রীর মেয়ে সোহিনী এবং তাঁর স্বামী কল্যাণময় ভট্টাচার্য আছেন আমেরিকায়। পার্থবাবুর বাড়ির পিছনে তাঁর ভাই থাকেন। সুদেব চট্টোপাধ্যায় নামে সেই ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
নাকতলায় পার্থের পড়শিদের কয়েক জন বলেন, ‘‘সারা ক্ষণ যারা ওঁকে ঘিরে থাকত, তারা এখন সব ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। পার্থবাবুর গ্রেফতারির পরেও কয়েক জনকে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগে বেলঘরিয়ায় অর্পিতার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হওয়ার পরে প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অধিকাংশ লোকজন উধাও। অনেকে তো শুনছি, বাড়িতেই থাকছেন না। জামাকাপড় পৌঁছে দেওয়ার লোক কোথায় আর!’’
ঘনিষ্ঠদের এই অন্তর্ধানের কারণ ব্যাখ্যা করে নাকতলা এলাকায় পার্থবাবুর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘মন্ত্রিত্ব ও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে পার্থ-ঘনিষ্ঠ কোনও তৃণমূল নেতা ও কর্মী এখন আর এ দিকে নেই। দলের উচ্চ নেতৃত্বের রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় এখন সকলেই গা-ঢাকা দিয়েছে।’’