শনিবার সকাল। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়ির সামনে। —নিজস্ব চিত্র।
টালিগঞ্জের সেই অভিজাত আবাসন, যেখানে অর্পিতার ফ্ল্যাট। —নিজস্ব চিত্র।
‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ২০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে শুক্রবার রাতে জানিয়েছিল ইডি। উদ্ধার হওয়া টাকা রাতেই গোনা শুরুর পর সকালে ইডি সূত্রে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত ২১ কোটি টাকা গুনতে পেরেছেন ব্যাঙ্ককর্মীরা। টাকা গোনার কাজ চলছে। ইডি সূত্রে খবর, তদন্তে সহযোগিতা করছেন না অর্পিতা। বাকি সব প্রশ্নের জবাব দিলেও, এই টাকার উৎস নিয়ে কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছেন না ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা।
বেলঘরিয়ার রথতলা এলাকায় একটি অভিজাত আবাসনে দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। আবাসিকরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগেও ওই ফ্ল্যাটে নিয়মিত দেখা যেত অর্পিতাকে। এ ছাড়া দেওয়ানপাড়াতেও একটি বাড়ি রয়েছে তাঁর। সেই বাড়িতে এখন তাঁর মা এবং অন্য আত্মীয়েরা থাকেন। রথতলার ওই আবাসনের বাসিন্দাদের কয়েক জনের দাবি, লালবাতি গাড়ি চড়ে কেউ কেউ আসতেন। কিন্তু তাঁরা অর্পিতার কাছেই আসতেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আবাসিকরা দাবি করছেন, সেখানে কে প্রবেশ করছেন, তা রেজিস্টারে লেখা থাকে। তা দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
টানা জিজ্ঞাসাবাদের ধকলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার সকালে তিনি অসুস্থবোধ করতে থাকেন বলে দাবি করেন তাঁর আইনজীবী অনিন্দ্যকিশোর রাউত। সকালেই চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয়। সকাল ৮টা নাগাদ নাকতলায় মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকতে দেখা যায় এক চিকিৎসককে। পরে জানা যায়, দু’জন চিকিৎসক মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে তাঁ বাড়িতে এসেছেন।
২৪ ঘণ্টা পার। এখনও নাকতলায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেই রয়েছেন ইডি আধিকারিকেরা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ইডির একটি দল পৌঁছয় পার্থের বাড়িতে। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটা পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও বাড়ি থেকে বেরোনোর নাম নেই কারও। গত রাতে দু’এক বার পার্থের আইনজীবী তথা তৃণমূল নেতা অনিন্দ্য কিশোর রাউত বেরিয়েছিলেন। তাঁকে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের কিছুই বলতে চাননি। ফলে জানা যায়নি, ভিতরে কী অবস্থা।
শনিবার গভীর রাতে আরও এক বার পুলিশের আনাগোনা বাড়ে। কালো পোশাক পরা পুলিশকর্মীদের মোতায়েন করা হয়। এ ভাবেই কাটে শুক্রবার রাত। শনিবার সকালেও নাকতলায় মন্ত্রীর বাড়ির সামনে একই রকম পুলিশি প্রহরা। ভিতরে মন্ত্রী এবং ইডি আধিকারিকরা।
সারা রাত এ ভাবেই পার্থের বাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে পুলিশের একাধিক গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। শনিবার সকাল ৭টা। এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা সেখান থেকে বেরোননি। বাড়ির বাইরে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশকর্মীরা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইডির গাড়িগুলি। সারা রাত কেউই বাড়ির বাইরে বেরোননি। রাতে দু’এক বার বেরিয়েছেন পার্থের আইনজীবী অনিন্দ্যকিশোর রাউত। তাঁকে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। তবে ভিতরে কী হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি অনিন্দ্য।
রাতেই পার্থের বাড়ির সামনে পৌঁছয় কালো পোশাকের কলকাতা পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
২২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বেরোননি ইডির আধিকারিকেরা। শুক্রবার সকাল প্রায় সাড়ে ৭টা থেকে শনিবার সকাল— পার্থের বাড়িতেই রয়েছেন তাঁরা।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী। মন্ত্রীর আইনজীবী অনিন্দ্য রাউত বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে কথা বললেন পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে।
বিশাল পুলিশ বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার সকালে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ইডির আধিকারিকেরা এসেছেন। টানা চলেছে প্রশ্নপর্ব। রাতেও সেই প্রশ্নের দমক থামেনি। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে নৈশভোজ সারেননি পার্থ। খেয়েছেন শুধু চা-বিস্কুট।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। আইনজীবীদের সামনে বসে সেই সব নথিতে সই করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসনে পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে নগদ প্রায় ২০ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। কিন্তু ঠিক কত টাকা রয়েছে, তা বুঝতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা। তার পর ডেকে পাঠানো হয় ব্যাঙ্ক কর্মীদের। তাঁরা টাকা গোনার মেশিন নিয়ে হাজির হন টালিগঞ্জের আবাসনের দোতলার ফ্ল্যাটে। শুরু হয় টাকা গোনার পালা। সূত্রের খবর, চারটি মেশিনে চলছে টাকা গোনা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ পার্থের বাড়িতে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হল। এসেছেন আরও এক জন ইডি আধিকারিক।
পার্থের বাড়িতে ইডি হানা নিয়ে শোরগোলের মধ্যে দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। ওই ফ্ল্যাটটি অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলার বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। ইডির দাবি, অর্পিতা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। তদন্তকারীদের আরও দাবি, ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার বাড়ি থেকে ২০টি মোবাইল ফোনও উদ্ধার হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রাও।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি-সহ মোট ১৩টি জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। সন্ধ্যায় ইডি টুইট করে জানায়, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি তদন্তের প্রেক্ষিতেই শুক্রবারের তল্লাশি অভিযান। তালিকায় রয়েছে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেখলিগঞ্জের বাড়ি-সহ এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন আহ্বায়ক শান্তিপ্রসাদ সিংহ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িও। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য, পর্ষদ সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচীর বাড়িতেও অভিযান চালায় ইডি।
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পৌঁছন ইডি আধিকারিকেরা। তখন থেকে শুরু করে এখনও সেখানেই রয়েছে তদন্তকারীরা।
সূত্রের খবর, ইডির তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন পার্থ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ভবানীপুুর থানার পুলিশের সঙ্গে এসএসকেএম-এর তিন জন চিকিৎসক এসেছিলেন তাঁর বাড়িতে। এক জন অর্থোপেডিক, এক জন মেডিসিন আর এক জন কার্ডিয়োর চিকিৎসক। পরে বিকেল ৪টে নাগাদ মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান চিকিৎসকেরা। পার্থের এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, পার্থের বাড়ির নীচে এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। তবে বাড়ির বাইরে রয়েছে নেতাজি নগর থানার পুলিশ।