ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার বিকেল। গরুপাচার মামলায় অনুব্রতর গ্রেফতারি নিয়ে তখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সে সময় প্রেসিডেন্সি জেলের ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডের দু’নম্বর সেলের বাইরে হাঁটাচলা করছিলেন সেখানকার আবাসিক রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন পদাধিকারী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমন সময়ই খবর পেলেন, ‘অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার’।
সূত্রের খবর, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির গ্রেফতারির খবর পার্থের কানে পৌঁছে দেন কারারক্ষীরা। খবর শুনেই ঘাড় ঘুরিয়ে রক্ষীদের পার্থ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘অনুব্রত কি এই জেলেই আসবে?’’
শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’ মামলায় গত ২২ জুলাই শুক্রবার পার্থর নাকতলার বাড়িতে নাটকীয় ভাবে হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সে দিন সকালে সাড়ে সাতটা নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পার্থর বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল তদন্তকারী সংস্থা। সে দিনই মধ্যরাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন অর্থাৎ ২৩ জুলাই, শনিবার সকালে পার্থকে বাড়ি থেকে বার করেন তদন্তকারীরা। তার পর যত তদন্ত এগিয়েছে, ততই পরতে পরতে নাটকীয় মোড় নিয়েছে ঘটনাপ্রবাহ। বর্তমানে পার্থর ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার।
২০ দিনের মাথায় খানিকটা একই কায়দায় ডেরা থেকে অনুব্রতকে পাকড়াও করল আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। বৃহস্পতিবার রাখিবন্ধনের দিন সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে বোলপুরে তৃণমূলের ‘কেষ্ট’র বাড়ি ঘিরে ফেলেন সিবিআই আধিকারিকরা। ঘণ্টাখানেক পর গরুপাচার মামলায় তৃণমূলের ‘দাপুটে নেতা’কে আটক করে গাড়িতে তোলেন তাঁরা। বর্তমানে ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন অনুব্রত। গভীর রাতে অনুব্রতকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে (যেখানে সিবিআই দফতর) এনেছে সিবিআই। গ্রেফতারের পর প্রথমে নির্বাক থাকলেও পরে জোকা ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে যাওয়া-আসার পথে একাধিক বার মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে পার্থকে। কিন্তু গরুপাচার-কাণ্ডে গ্রেফতারের পর ‘মুখর’ অনুব্রত একেবারে ‘চুপ’ হয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হুগলির ধনেখালিতে যানজটে আটকে যায় সিবিআইয়ের গাড়ি। যানজটে আটকে থাকার সময় সংবাদিকরা অনুব্রতের গ্রেফতারি নিয়ে তাঁকে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। সে সব প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে সামনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন অনুব্রত। কখনও তোয়ালে দিয়ে মুখ মোছেন, জল খান, হাই তোলেন, মাথা এলিয়ে দেন গাড়ির সিটে। গাড়ির কাচের ও পার থেকে ছুটে আসা সাংবাদিকদের লাগাতার প্রশ্ন শুনে এক বার হেসেও ফেলেন। আগামী দিনে মুখে কুলুপ খুলে অনুব্রত কথা বলেন কি না, সে দিকে নজর থাকবে।
গ্রেফতারের পর পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর পাশাপাশি তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে। অনুব্রতর বিরুদ্ধেও সেই একই পথে হাঁটবে কি না, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি।