পার্থ চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর কোনও ‘ভূমিকা’ নেই। সোমবার আলিপুরের নগর দায়রা আদালতের শুনানিতে ফের এমন দাবি করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজের দাবির সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে ব্যাখ্যা করলেন, কী ভাবে কাজ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। সেই ব্যাখ্যায় তিনি জড়িয়ে নিলেন মুখ্যমন্ত্রীকেও। পার্থ যে এসএসসি-তে নিয়োগ কর্তা বা সুপারিশ কর্তা ছিলেন না, সে কথা তিনি আদালত চত্বরে একাধিক বার বলেছেন। তবে এই প্রথম তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জড়িয়ে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও আদালত থেকে বেরোনোর সময় পার্থ আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে জানান যে, মুখ্যমন্ত্রী কখনওই ‘নিয়োগকর্তা বা সুপারিশকর্তা’ নন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর ‘আনুগত্য এখনও অপরিসীম’ বলেও জানান পার্থ।
সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানির সময় এসএসসির কার্যপদ্ধতি ব্যাখ্যা করার সময় পার্থের আইনজীবীর বক্তব্যে ওঠে মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ। পার্থ তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে কেন এই প্রসঙ্গ আদালতে তুললেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। সোমবার আদালত থেকে বেরিয়ে যদিও পার্থ বলেন, ‘‘দোহাই! আপনারা বিকৃত ভাবে কখনও সংবাদ পরিবেশন করবেন না। মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগকর্তা নন। সুপারিশ কর্তাও নন। ইংরেজিতে আমি ‘পলিসি মেকিং’ বলেছি। যাঁরা বোঝেন ইংরেজি, তাঁরা বুঝেছেন।’’ এর পরেই পার্থ জোর গলায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য আমার অপরিসীম ছিল। রয়েছে। আগামী দিনেও থাকবে।’’
একই সঙ্গে আদালতের কাছে সোমবার জামিনের আর্জি জানিয়েছেন পার্থ। নিয়োগ দু্র্নীতি মামলায় তাঁকে যে কোনও প্রকারেই হোক জামিন দেওয়া হোক, আইনজীবীর মাধ্যমে এই আবেদনই জানিয়েছেন তিনি। আদালতের কাছে পার্থের আর্জি, গত এক বছরে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি সিবিআই। এই দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কোনও ‘ভূমিকা’ নেই। এই দাবির সপক্ষেই পার্থ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে ব্যাখ্যা করেন, কী ভাবে কাজ করে এসএসসি। আদালতে তিনি জানিয়েছেন, এএসসি আইনে ১৯৯৭ সালের পর থেকে একাধিক সংশোধন হয়েছে, যা শিক্ষা দফতর করেনি। সরকার করেছে। পার্থের দাবি, এসএসসির দু’টি বিষয় রয়েছে। এক, নীতি প্রণয়ন। দুই, কী ভাবে কাজ করে এই সংস্থা। আদালতে তিনি দাবি করেন, এসএসসি নিজস্ব নীতিতেই চলে। সেখানে মন্ত্রীদের কোনও ভূমিকা নেই। পার্থ নিয়োগকর্তা কিংবা সুপারিশকর্তা ছিলেন না বলেও দাবি করেন। নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি নির্দিষ্ট দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে রিপোর্ট দেন। তাঁরা মুখ্য সচিবকে রিপোর্ট করেন। এর পর মুখ্যসচিব রিপোর্ট দেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
এসএসসির কার্যপদ্ধতি নিয়ে আদালতে পার্থ এই ব্যাখ্যা দিতেই জল্পনা শুরু হয়। প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ অগস্ট পর্যন্ত পার্থকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।