শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
এত দিন ছিল নানা পদক্ষেপের সমালোচনা, ঠারেঠোরে খোঁচা। এ বার রাজ্যপালকে সরাসরি আক্রমণের রাস্তায় হাঁটলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিলিগুড়িতে রাজ্যপালের প্রশাসনিক বৈঠককে যে মোটেই সহজ চোখে দেখছে না রাজ্যের শাসক দল, কড়া বিবৃতি প্রকাশ করে তা মঙ্গলবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল মহাসচিব। ‘রাজনৈতিক ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট’ মন্তব্য করছেন রাজ্যপাল— পার্থ এ দিন এমনই মন্তব্য করেছেন।
‘‘সরকারি আধিকারিক এবং বিভিন্ন সরকারি বিভাগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট মন্তব্য করে রাজ্যপাল কাজে যোগ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তিনি নিরপেক্ষ ব্যক্তি নন,’’— এই রকম কড়া ভাষাতেই শুরু হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এ দিনের বিবৃতি।
শিলিগুড়িতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এ দিন যে প্রশাসনিক বৈঠক করেন, সেখানে আমলা এবং পুলিশকর্তারা হাজির হননি। হাজির হননি স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও। বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা অবশ্য হাজির হয়েছিলেন রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে। শাসক দল এবং প্রশাসনের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি নিয়ে পরে মুখ খোলেন রাজ্যপাল। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘হয়তো সবাই একসঙ্গে ব্যস্ত ছিলেন।’’ তবে এই বৈঠকে প্রশাসন এবং শাসক দলের প্রতিনিধিরা যোগ দেননি বলে তিনি আর কখনও এ রকম বৈঠক করবেন না, এমনটা ভাবলে ভুল হবে বলেও রাজ্যপাল বুঝিয়ে দেন। তিনি সব জেলায় যাবেন বলে রাজ্যপাল এ দিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান। রাজ্যপালের সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই বিবৃতি প্রকাশ করেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘আমাদের সংবিধান অনুসারে রাজ্য সরকার একটা নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় সরকারও তাই। কিন্তু রাজ্যপাল মনোনীত হন, তিনি নির্বাচিত নন।’’ সংবিধানে রাজ্য সরকারের ভূমিকা এবং রাজ্যপালের ভূমিকা খুব স্পষ্ট করেই চিহ্নিত করা রয়েছে বলেও পার্থর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘রাজীবকে অবিলম্বে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা প্রয়োজন’, রায়ে লিখলেন বিচারক
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমালের দিন রাজ্যপাল সেখানে গিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে। তৃণমূল তারও বিরোধিতা করেছিল পর পর দু’দিন বিবৃতি প্রকাশ করে। রাজভবন পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যের জবাব দেয়। ফলে সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হয়েই ছিল। এ দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিবৃতিতে সেই সঙ্ঘাত আরও বাড়ার ইঙ্গিত মিলল।
আরও পড়ুন: বৈঠকে গেল না প্রশাসন-তৃণমূল, ক্ষোভ উগরেও রাজ্যপাল বললেন ‘প্রত্যেক জেলায় যাব’
সাংবিধানিক পদে থেকে সরকার এবং সরকারি কর্তাদের কাজে নাক গলানো এবং অপ্রয়োজনে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠা কাঙ্ক্ষিত নয়— পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিবৃতিতে এই রকমই লেখা হয়েছে এ দিন। পার্থর মতে, ‘‘সাংবিধানিক এক্তিয়ারের অপব্যবহার এবং প্রাত্যহিক রাজনৈতিক গিমিক রাজ্যপালের এড়িয়ে চলা উচিত।’