(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং (ডান দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরেই তৎপরতা শুরু হল পরিষদীয় দফতরে। সোমবার করম পুজো উপলক্ষে সরকারি প্রশাসনের সব দফতরে ছুটি রয়েছে। তা সত্ত্বেও ধুপগুড়ির বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়কে শপথবাক্য পাঠ করাতে সোমবারই চিঠি পাঠানো হচ্ছে রাজভবনে। ৮ সেপ্টেম্বর ধুপগুড়ি উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়। বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়কে হারিয়ে জয় পান তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র। রাজভবন এবং পরিষদীয় দফতরের দড়ি টানাটানিতে এখনও পর্যন্ত বিধায়ক পদে শপথ নিতে পারেননি তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী। শেষমেশ বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতেই জট খোলার ইঙ্গিত মিলেছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। কেন এত দিন বিধায়কের শপথ নেওয়া সম্ভব হয়নি, রবিবার সন্ধ্যায় ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীকে তা জানান পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নির্দেশ দেন রাজভবনকে চিঠি পাঠিয়ে দ্রুত বিধায়কের শপথগ্রহণের বন্দোবস্ত করতে। কারণ, মঙ্গলবার থেকে রাজভবনে থাকবেন না রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
মঙ্গলবার রাজ্যপাল যাবেন দিল্লি। বুধবার রাজধানী থেকেই পাড়ি দেবেন আমেরিকায়। তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা ৭ অক্টোবর। কোনও কারণে সোমবার রাজ্যপাল শপথগ্রহণের অনুমোদন না দিলে, তা আরও দিন দশেক পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই পরিষদীয় দফতর চাইছে এ যাত্রায় আর কোনও দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে রাজভবনের অনুমোদন আদায় করতে। কারণ ৮ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হওয়ার পরেই পরিষদীয় দফতর চিঠি দেয় রাজভবনকে। কিন্তু রাজভবন-নবান্নের সংঘাতের কারণে তাঁর শপথগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি বলেই অভিযোগ। আবার শনিবার উপনির্বাচনে জয়ী বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করানোর জন্য রাজভবনের তরফে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়নি। পরিষদীয় দফতরের অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে গিয়ে একক ভাবে বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করানোর আয়োজন করেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু পরিষদীয় দফতর সায় না দেওয়ায় শপথগ্রহণের সেই অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি রাজভবনের তরফে।
পরিষদীয় দফতরের অভিযোগ, কোনও বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করাতে হলে পরিষদীয় দফতরের ফাইলে রাজভবনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সেই ফাইল ফিরে এলে দফতরের তরফেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম বার রাজভবনে পাঠানো পরিষদীয় দফতরের চিঠির এখন আর কোনও বৈধতা নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আবারও চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
পরিষদীয় দফতরের আশা, শপথ সংক্রান্ত বিষয়ে এ বার রাজভবনের অনুমোদন পেয়ে যাবেন তারা। সেই অনুমোদন পেলেই চলতি সপ্তাহে যে কোনও দিন ধুপগুড়ির বিধায়ককে বিধানসভায় শপথবাক্য পাঠ করানো হবে। তবে কে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন তা নির্ভর করছে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের উপর। যেহেতু রাজ্যপাল নিজে শহরে থাকবেন না, তাই তাঁর শপথবাক্য পাঠ করানোর কোনও সম্ভাবনাই থাকছে না বলে মনে করছে পরিষদীয় দফতর। সে ক্ষেত্রে রাজ্যপাল স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা ডেপুটি স্পিকার আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই দায়িত্ব দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিধানসভার সচিবালয়ের একাংশ জানাচ্ছে, পরিষদীয় দফতর তাদের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বললেই এক দিনের মধ্যে সেই আয়োজন সেরে ফেলার মত প্রস্তুতি রেখেছেন তাঁরা। এখন অপেক্ষা শুধুমাত্র রাজ্যপালের অনুমতির।