শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে থাকাকালীনই পরেশ অধিকারী শাসকদলে যোগদান করেছিলেন। ফাইল চিত্র।
মেয়ের চাকরি-সহ তিন শর্তে ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন পরেশ অধিকারী। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এমনটাই দাবি করলেন। পরেশ যখন তৃণমূলে যোগ দেন, সেই সময় শুভেন্দুও ওই দলে। সেই সুবাদেই তিনি এ কথা জেনেছিলেন বলে বুধবার জানিয়েছেন শুভেন্দু।
বুধবার বিকেলে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে রাজভবনে আসেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাজভবন থেকে বাইরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘পরেশ অধিকারী যোগদানের সময়ে তিনটি শর্ত রেখেছিলেন। প্রথম, সমস্ত নিয়ম ভেঙে তাঁর মেয়েকে চাকরি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাঁকে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করতে হবে। তৃতীয়ত, চ্যাংড়াবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করতে হচ্ছে তাঁকে।’’ সেই সময় শুভেন্দু শাসকদলের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর দাবি, তৃণমূলে থাকার কারণেই তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। শুভেন্দু বুধবার বলেন, ‘‘বামপন্থী মানুষ। ফরওয়ার্ড ব্লক করতেন তিনি। কিন্তু কোনও আদর্শগত কারণে তিনি তৃণমূলে যোগ দেননি। দেওয়া-নেওয়ার শর্তের ভিত্তিতে তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়া।’’ শুভেন্দুর আরও দাবি, ‘‘বিনিময়ের ভিত্তিতে পরেশের এই যোগদান তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশ ছাড়া হয়নি। পরেশ অধিকারীর মেয়ের নিয়োগ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই হয়েছিল। সেতুবন্ধনের কাজটি করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আশা করব তিনি জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই সত্য উদঘাটন করবেন।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৭ অগস্ট তৃণমূল মহাসচিব পার্থের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন বামফ্রন্ট আমলের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। তার আগেই পরেশের মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী শিক্ষিকা পদে চাকরি পান। সেই সময় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ। সেই সময়তেই নিময়মবর্হিভুত ভাবে তাঁর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ওই অভিযোগকে আমল দিতে চাননি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী। পরে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়ের পরিবর্তে কোচবিহার আসনে তৃণমূল প্রার্থী করা হয় পরেশকে। কিন্তু বিজেপির নিশীথ প্রামাণিকের কাছে তিনি পরাজিত হন। এর মধ্যে তাঁকে কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে বসান মুখ্যমন্ত্রী। ২০২১ সালে তাঁর পুরনো বিধানসভা কেন্দ্র মেখলিগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে টিকিট দেওয়া হয় পরেশকে। প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধানের পরিবর্তে টিকিট দেওয়া হয় তাঁকে। জেতার পরেই চমক দিয়ে মমতার মন্ত্রিসভায় স্কুল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হন তিনি।
২০১৬ সালে মমতার সরকারের পরিবহণমন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু। ২০২০ সালের শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়েন। একুশের ভোটে বিজেপি-র প্রতীকে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রাম থেকে জয়ী হয়ে বিরোধী দলনেতা হন তিনি।