পিছনে পড়ে রইল ভিটে-মাটি-পরিজন। তবু আশা, দেশ ছাড়তে পারলে অন্তত রেহাই মিলবে তালিবানের হাত থেকে। কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে স্বস্তির হাসি মেয়ে কোলে বাবার। শুক্রবার। রয়টার্স
ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন বাবা-মা। তবে জানতে পেরেছেন, আফগানিস্তান থেকে বেরোতে পেরেছে ছেলে। আপাতত মার্কিন সেনার সঙ্গে আছে কাতারে।
উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার চাতরা পঞ্চায়েতের সলুয়া গ্রামে থাকেন ইন্দ্রজিৎ রায় (নাম পরিবর্তিত)। বছর পঁচিশের যুবক গত বছর কাজ পেয়ে গিয়েছিলেন আফগান মুলুকে। সেখানে মার্কিন সেনার জন্য রান্নার কাজ করতেন একটি ক্যাম্পে।
সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ তালিবানের বাড়বাড়ন্ত হল সে দেশে। ছেলেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে আসতে বললেন বাবা-মা। কিন্তু বললেই তো হল না। আফগানিস্তানে তখন শুরু হয়েছে ডামাডোল। আটকে পড়লেন ইন্দ্রজিৎ। আর এ দেশে বসে টিভির পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারছেন না বাবা-মা-বোন, আত্মীয়েরা। গোলাগুলির খবর শুনছেন, আর বুক কেঁপে উঠছে। বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখে হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার জোগাড়।
নিয়মিত যোগাযোগও হচ্ছিল না ছেলের সঙ্গে। বাবা অমল (নাম পরিবর্তিত) বলেন, ‘‘ছেলে যেখানে থাকত, সেখানে মার্কিন সেনাদের আস্তানা। ফলে শুরুর দিকে ততটা ভয় পাইনি আমরা। জানতাম, ছেলে সুরক্ষিতই আছে। কিন্তু পরে জানলাম, সমস্ত বাহিনীই ফিরে যাচ্ছে। ছেলের কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ি।’’
সোমবার দিনভর ছেলের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। দুশ্চিন্তায় কেটেছে পুরো সময়টা। তবে বুধবার যোগাযোগ হয়েছে। ইন্দ্রজিৎ পরিবারকে জানিয়েছেন, মার্কিন সেনাই তাঁকে নিয়ে গিয়েছে কাতারে। সেখান থেকে ফিরবেন শীঘ্রই।
ইন্দ্রজিতের মা মন্দিরা (নাম পরিবর্তিত) বলেন, ‘‘ছেলের জন্য আমরা কেউ তিন দিন ঘুমোতে পারিনি। এই উৎকণ্ঠা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’’
বাড়ি ফিরলে কি আর বিদেশে পাঠাবেন ছেলেকে? ইন্দ্রজিতের বাবার কথায়, ‘‘ঘরের কাছে চাকরি পেলে কে আর এত দূরে পাঠাতে চায়। সরকারের কাছে অনুরোধ করব, সুস্থ অবস্থায় ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিন। আর যাতে এলাকায় থেকে কাজ করতে পারে, সে রকম একটা ব্যবস্থা করুন।’’