বিধি ভেঙে স্কুলবাস চলাচলের অভিযোগ নিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টে নালিশ জানালেন অভিভাবকরা। রবিবার উত্তরবঙ্গের গার্জিয়ান ফোরামের তরফে ই-মেল করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ই-মেলে স্কুলবাসগুলির লড়ঝড়ে পরিস্থিতি থেকে গত সপ্তাহে পরপর দু’বার মদ্যপ চালকদের স্কুলবাস চালানোর অভিযোগ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে স্কুলবাসগুলি অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে পড়ুয়াদের আনা-নেওয়া করে বলেও অভিযোগ জানিয়েছে ফোরাম। পড়ুয়াদের নিয়ে চলাচল করতে হলে বাসে কী কী পরিকাঠামো থাকবে, কোন কোন সর্তকতা নিতে হবে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেরই নির্দেশিকা রয়েছে। দেশের যে কোনও প্রান্তে চলাচলকারী স্কুলবাস সেই নির্দেশিকা মানতে বাধ্য। শিলিগুড়িতে সেই নির্দেশিকা খেলাপ করে বাস চলার ঘটনা দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননার সামিল বলে দাবি অভিভাবকদের। সুপ্রিম কোর্টে নালিশও সে কারণেই বলে ফোরামের দাবি।
ফোরামের তরফে দাবি করা হয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই অনিয়ম নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চিন্তাভাবনা চলছিল। গত সপ্তাহে পরপর দু’টি ঘটনার পরে গত শনিবার শিলিগুড়ির স্কুলবাস মালিক সংগঠনের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকায় থাকা সব শর্ত পূরণ করতে হলে পড়ুয়াদের থেকে নেওয়া ভাড়া অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে হবে। অভিভাবকদের ওপর চাপ বাড়াতে চান না বলেই দাবি করেন বাস মালিকদের একাংশ। এই দাবিতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফোরামের সদস্যরা।
তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, একজন পড়ুয়ার থেকে কিলোমিটার পিছু অন্তত সাড়ে ১৩ টাকা করে শিলিগুড়িতে বাস ভাড়া নেওয়া হয়। যদিও, যাত্রীবাসী বাসে কিলোমিটার পিছু ৯০ পয়সা ভাড়া দিতে হয়। ফোরাম জানিয়েছে, যাত্রীবাহি বাসের ভাড়া সরকারের তরফে ঠিক করে দেওয়া। সে কারণে দুই ভাড়ায় এতটা তারতম্য হওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়টিও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টারকে জানিয়েছে ফোরাম। ফোরামের সভাপতি সন্দীপন ভট্টাচার্য এ দিন ই-মেল পাঠিয়েছেন। সন্দীপনবাবু বলেন, ‘‘আপাতত সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টারকে ই মেল করে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আগে একাধিকবার প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তার পরেও কোনও পদক্ষেপ হয়নি। এবার দেখা যাক প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করে কিনা।’’
শিলিগুড়িতে স্কুলবাসগুলির পরিস্থিতি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টকে ওয়াকিবহাল করাতে বছর চারেক আগের একটি সরকারি চিঠিও ই-মেলের সঙ্গে পাঠিয়েছেন সন্দীপনবাবু। দু’হাজার বারো সালে ফোরামের তরফে মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে একটি দল পর্যবেক্ষণও চালায়। সেই পর্যবেক্ষণের রিপোর্টে কয়েকটি স্কুলবাসগুলির ‘শোচনীয় দশা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ফোরামের দাবি সেই পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি।
সন্দীপনবাবু বলেন, ‘‘বছর কয়েক আগে প্রশাসনের রিপোর্টে স্কুলবাসের শোচনীয় দশা বলে উল্লেখ করে। যদিও, তারপরে প্রশাসনের কোনও পদক্ষেপ হয়নি।’’ যদিও, প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, অভিযান চলছে। এ দিনও শিলিগুড়ির এআরটিও (সহ পরিবহণ আধিকারিক) নবীন অধিকারী বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহেও অভিযান চলবে।’’
শিলিগুড়ির স্কুলবাস মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ফোন তোলেননি। তবে সংগঠনের এক পদাধিকারী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা বছর দেড়েক আগে আমরা জেনেছি। তার পর থেকে পুরোনো বাস বদলানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এবং কিছু বাসে পরিকাঠামো পরিবর্তন শুরু হয়েছে। তবে তা রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়। আমরা অভিভাবকদের থেকেও সহযোগিতা চাইছি।’’
যদিও, ফোরামের সদস্যদের পাল্টা দাবি, পড়ুয়াদের সুরক্ষার বিনিময়ে কোনভাবে আপস করা সম্ভব নয়। এক অভিভাবকদের এক জনের মন্তব্য, ‘‘আগামী সপ্তাহ থেকে গরমের ছুটি শুরু হচ্ছে। মাসখানেকের ছুটির পরে সব নির্দেশিকা পালন না হলে আদালত অবমাননার মামলা করার কথা ভাবা হবে।’’