মৃত্যু হল আন্দোলনকারী রেবতী রাউতের। ছবি: ফেসবুক থেকে।
অঘটন ঘটে গেল পার্শ্বশিক্ষকদের অনশনে। অনশনরত অবস্থায় ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেন এক জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি এনআরএসে ভর্তি। অনশনে অসুস্থ হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাড়িতে ফিরে যাওয়া এক পার্শ্বশিক্ষিকারও মৃত্যু ঘটল। যদিও পুলিশ সূত্রের দাবি, বাইক থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে রেবতী রাউত নামে ওই মহিলার। তবে পার্শ্বশিক্ষক সংগঠনের দাবি, অনশনজনিত অসুস্থতাতেই রেবতীর মৃত্যু হয়েছে।
রেবতী রাউতের মৃত্যু, তাপস বরের ব্রেন স্ট্রোক ছাড়াও অন্তত ৬ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের তরফে দাবি করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছে বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মী সংগঠন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর ব্লকের দক্ষিণ বোড়াই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন পার্শ্বশিক্ষিকা রেবতী রাউত। সমকাজে সমবেতন এবং এ পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া-সহ মোট ৪ দফা দাবি নিয়ে পার্শ্বশিক্ষকরা অনশন এবং অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন সল্টলেকে। গত ১১ নভেম্বর থেকে তাঁদের এই অনশন শুরু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পার্শ্বশিক্ষকরা আন্দোলনস্থলে আসছেন। কেউ অবস্থানে যোগ দিচ্ছেন, কেউ অনশন করছেন। রেবতী রাউত ১৪ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু করেছিলেন। এর পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে বিধাননগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায়, সেখান থেকে পাঠানো হয় এনআরএসে। সামান্য সুস্থ হওয়ার পরে তাঁকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন পরিজনরা। সেখানেই রেবতী রাউতের মৃত্যু হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, অনশনজনিত অসুস্থতা থেকেই রেবতীর মৃত্যু হয়েছে। তবে, পুলিশ সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, একটি বাইক দুর্ঘটনায় রেবতী রাউত মারা গিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও মেলেনি।
তাপস বরের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। নিজস্ব চিত্র।
অনশন মঞ্চে আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার যিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির সেই তাপস বরের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চ জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে ‘ব্যবসা’র পরামর্শ মমতার
আরও পড়ুন: রোজভ্যালি কর্তার স্ত্রী শুভ্রার ফ্ল্যাটে হানা ইডি গোয়েন্দাদের, তল্লাশি আরও বেশ কয়েক জায়গায়
পার্শ্বশিক্ষক মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চৌধুরী এ দিন ঐক্য মঞ্চের তরফে বলেছেন, ‘‘১৬ নভেম্বর থেকে তাপস বর অনশনে ছিলেন। আজ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাপস বরের ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে। প্রথমে তাঁকে বিধাননগর হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন এনআরএসে পাঠানো হয়েছে বলে শুনছি।’’
গোটা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হল রেবতী রাউতকে। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অন্য শিক্ষকরা। অথচ রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই। আরও এক বার প্রমাণিত হল, সমাজ গড়ার কারিগর যাঁরা, তাঁরা আজ এই পশ্চিমবঙ্গে চরম ভাবে অবহেলিত, লাঞ্ছিত।’’
বিজেপির সরকারি কর্মী সংগঠন কর্মচারী পরিষদও তীব্র আক্রমণ করেছে রাজ্য সরকারকে। পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশিস শীল বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে পার্শ্বশিক্ষকদের সঙ্গে এই সরকার বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনটাও শুরু করতে দিচ্ছিল না। আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আন্দোলনের অনুমতি পেতে হল। তার পরেও রাজ্য সরকার নিজের জেদে অটল।’’
বিষয়টি নিয়ে বিজেপির যুব মোর্চাও ময়দানে নেমে পড়েছে। যুবনেতা শঙ্কুদেব পন্ডা এ দিন সন্ধ্যায় এনআরএসে যান চিকিৎসাধীন তাপস বরকে দেখতে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তাঁর অভিযোগ, ‘‘তাপস বরের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তাঁর কী হবে, বলা কঠিন। কিন্তু এনআরএসে এনে ফেলে রাখা হয়েছে। কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না।’’
শুক্রবার শোকদিবস পালন করা হবে বলে এ দিন সন্ধ্যায় ঘোষণা করেছে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ। মোমবাতি জ্বালিয়ে শোক পালনে অংশ নেওয়ার জন্য গোটা রাজ্য থেকে পার্শ্বশিক্ষকদের কলকাতায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। রেবতী রাউতের পরিজনদেরও আনার চেষ্টা চলছে।