লুকিয়ে: আতঙ্কে কাঁটা জলঙ্গির ঘোষপাড়া। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
ক’দিন আগে জুজুর নাম ছিল এনআরসি, জঙ্গি-যোগে জেলার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় জুজু এখন এনআইএ! শুক্রবার রাতে আল কায়দা জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক-সুতোয় মুর্শিদাবাদের ডোমকল-জলঙ্গির ৯ গ্রামবাসীর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা এখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ-র আতঙ্কে ভুগছেন।
কেউ আঁতকে উঠে বলছেন, ‘‘ওহ, আল্লা আমার পোলাটা তো সব সময় আতিউরের সঙ্গে ঘুরত, ওর কী হবে গো!’’ কেউ কপাল চাপড়াচ্ছেন বিশ্বাসপাড়ার মুন্নার সঙ্গে তাঁর ছেলের ওঠাবসা গপ্পগুজবের সম্পর্ক থাকায়। মধুবোনার মালেজান বেওয়া মাথা কুটছেন তাঁর সদ্য তরুণ ছেলে সর্বদা অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে মাথা তোলে না কেন ভেবে। বলছেন, ‘‘বারবার বলেছি, ফোন রাখ, কাজ কর। এ বার বোঝ, মইনুল-ইয়াকুবের মতো ফোন ঘেঁটে বিপদ ডেকে আনিসনি বাবা!’’
মাস কয়েক আগেও সীমান্তের ওই সব গ্রামীণ মানুষের আতঙ্ক ছিল এনআরসি। নব্য আইনে তাঁদের না ভিটেমাটি ছাড়তে হয়, এই দুর্ভাবনায় ঘুম উড়েছিল অধিকাংশের। শুক্রবার সীমান্তের গাঁ-গঞ্জে এনআইএ-র পা পড়ার পরে ভয় এখন গোয়েন্দাদের নিয়ে। মধুবোনার এক যুবক বলছেন, ‘‘আতিউরকে চিনব না কেন। গল্পগাছাও তো হত। মাচায় এসে ও নানা রকম উপদেশ দিত। আমরা বলতাম, সিনেমা দেখি চল, ও তখন ধর্মের কথা তুলত। বিরক্ত লাগত গোঁড়ামি দেখে। কী জানি, ওর সঙ্গে ভাব ছিল বলে এনআইএ আমাদের ঘরেও পা রাখবে কিনা!’’ কালীনগরের বাসিন্দা এক দোকানি রানিনগরে আবু সুফিয়ানের দর্জির দোকানের কাছে পসরা নিয়ে বসতেন। বলছেন, ‘‘কখনও কখনও আবুর সাইকেলের পিছনে বসে যে গ্রামে ফিরিনি এমন নয়। আমিও টার্গেট হয়ে গেলাম না তো!’’ এই অবোধ ভয় ছায়া ফেলেছে মধুবোনা থেকে গঙ্গাদাসপাড়া— জঙ্গি সন্দেহে এনআইএ-র হাতে গ্রেফতার হওয়া ৬ যুবকের সাবেক গ্রামে।
আরও পড়ুন: অতীত ভুললে ভবিষ্যৎ অন্ধকার, বার্তা শুভেন্দুর
আরও পড়ুন: ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান, চ্যাট গ্রুপে জেহাদি বার্তালাপ
মহকুমা সদর ডোমকলের পাড়ার মোড়ের জটলাগুলোয় কান পাতলেও এমনই ত্রাসের গুঞ্জন। ডোমকলের এক পরিযায়ী শ্রমিক আনারুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘কেরল থেকে তো আমিও এসেছি, বুকটা ধড়ফড় করছে, আমিও জড়িয়ে পড়লাম না তো, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে কোনও কিছু না বুঝেই জঙ্গির তকমা লেগে যাবে না তো!’’
ছেলেপুলেদের অভিভাবকদের ভয় কিঞ্চিৎ বেশি। রানিনগরের জিয়াদ আলি বলছেন, ‘‘এমন পরিস্থিতির সামনে কখনও পড়িনি আমরা। রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে, বাড়ির পাশের শান্ত-ভদ্র ছেলেগুলো যে ভাবে তলে তলে জঙ্গি হয়ে উঠেছে টেরই পাইনি। আমার ছেলেও তো বড় হয়েছে, সে দিন সটান তাকে জিজ্ঞাসা করেই বসলাম, হ্যাঁরে বাবা, তুই কিছু করছিস না তো!’’