Coronavirus

Coronavirus: অতিমারির রমরমায় লুকিয়ে ক্ষমতার ভাইরাস

কেন বার বার ইউরোপ, আমেরিকায় বিপদের আগাম আভাস মেলার পরে যথেষ্ট সময় পেলেও অতিমারি মোকাবিলায় টনক নড়ে না এ দেশের সরকারি কর্তাদের?

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ কেমন অসুখ, যাতে মাকে শেষ বার স্পর্শ করা যায় না! অথচ এই অসুখেই লাখো লোকের ঘেঁষাঘেঁষির জমায়েতে পুণ্য লোভে মেলা আয়োজনে বাধা নেই। সমাজমাধ্যমে হাহাকার করে অসহায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কোভিডে সদ্য মাতৃহারা, নিজে কোভিড থেকে উঠে আসা তরুণী।

Advertisement

বছর শেষের রাতে টিভিতে পার্ক স্ট্রিটের উল্লাস দেখতে দেখতেও কারও কারও মনে হয়েছে, তা হলে কি এ ভাবেই কয়েক জন উৎসব করে যাবে, আর তাদের থেকে সংক্রমিত হয়ে বেঘোরে প্রাণ যাবে দুর্বল, অশক্ত বা বয়স্কদের? দেশ বা রাজ্যে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন বার বার ইউরোপ, আমেরিকায় বিপদের আগাম আভাস মেলার পরে যথেষ্ট সময় পেলেও অতিমারি মোকাবিলায় টনক নড়ে না এ দেশের সরকারি কর্তাদের? বরং কিসে কী বিপদ জেনে বুঝেও আমরা বার বার বিপদের পথটাই ক্রমশ নানা বেলাগাম যথেচ্ছাচারে আরও প্রশস্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কী এর কারণ! এও কি তবে এক ধরনের ক্ষমতার ভাইরাস, ক্ষমতার রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই তার ক্রমশ বিস্তার ঘটায়? বৃহস্পতিবার গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানির পটভূমিতেও প্রশ্নগুলো অনেকেরই প্রাসঙ্গিক লাগছে।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে মাতৃহারা দমদমের চান্দ্রেয়ী বসু যেমন বলছিলেন, “এখনও সবার কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছয়নি। আমার ৮৬ বছরের বাবাকেই তাঁর অসুস্থতার জন্য ভ্যাকসিন দিতে পারিনি, প্রশাসন তো এই অসহায় মানুষগুলোর কাছে টিকা পৌঁছে দিতে পারত। তার বদলে মেলা, উৎসব করে তাঁদের জীবন আরও বিপন্ন করা হচ্ছে।”

Advertisement

শীতের নানা অনুষ্ঠানের দোসর আবার চলতি মাসে নির্ধারিত শিলিগুড়ি, আসানসোল, চন্দননগর, বিধাননগর— রাজ্যের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পুরসভার ভোট। অনেকের চোখেই এখন রাজ্যে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মাথায় নিয়ে গত বছরের বিধানসভা ভোটের ছবিটা ভাসছে। কিংবা গঙ্গাসাগরের আয়োজন দেখে মনে পড়ছে যোগী-রাজ্যে কুম্ভমেলার কথা। আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী বলছিলেন, “আসলে ভোট বা ধর্মীয় মেলা, ভারতে সব কিছুই রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। ভোটে হারলে এক-একটি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাবে। তাই মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়েও দু’মাস ধরে ভোট যজ্ঞ চলে। ধর্মীয় মেলা বা উৎসব আয়োজনে পিছিয়ে এলেও রাজনৈতিক ক্ষতির শঙ্কা। গণতন্ত্রে রাজনীতির এই সর্বগ্রাসী ছায়া দুর্ভাগ্যের।”

তবে সব দায় সরকারের নয়, আমাদের শিক্ষিত মানসেও নানা খামতি রয়েছে বলে মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বসু। তাঁর সঙ্গে একমত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক শমিতা সেন। তিনি বলছেন, “আমেরিকা, ব্রিটেনও তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে ব্যর্থ। কিন্তু মেলা, উৎসব চলবে অথচ স্কুল, উড়ান বন্ধ থাকবে, এটা অদ্ভুত!” ২০২০তে অতিমারির প্রকোপের পরে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন, ব্রাজিলের জাইর বোলসোনারো, ব্রিটেনের বরিস জনসন বা ভারতের মোদীর নানা সিদ্ধান্ত বিশ্ব জুড়ে কড়া নিন্দার মুখে পড়েছে। সে কথা মনে করিয়ে হৃদরোগের চিকিৎসক কুণাল সরকার বলছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গেও গঙ্গাসাগর মেলাটেলা ঘটলে ভয়ঙ্কর পরিণাম হতে পারে। জনমোহিনী রাজনীতি আর জনস্বার্থের এই ফারাক খুবই করুণ।”

অথচ ভারতের মতো দেশে সরকারি সদিচ্ছা থাকলে সংক্রমণের ছবিটা পাল্টাতে পারত বলে মত দেশবিদেশের পণ্ডিতদের অনেকেরই। দীপেশ বলছিলেন, “ভারতে টিকার জোগানে অভাব বা মাস্ক নিয়ে অজ্ঞতা আছে। কিন্তু আমেরিকার মতো মাস্ক বা টিকা-বিরোধী উদ্ভট একগুঁয়েমি নেই। ভারতে এখনও সাধারণ লোকের কাছে সরকারের কথার গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই এত বড় সঙ্কটে ভারতে কোনও সরকার উৎসব, অনুষ্ঠানে একটু কম গুরুত্ব দিলেই ভাল করতেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement