ইডির দফতর থেকে বার হলেন পাচু রায়। — নিজস্ব চিত্র।
সময়ের আগেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দফতরে পৌঁছেছেন। তার পরেও তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এমনটাই দাবি করলেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান পাচু রায়। তিনি এ-ও অভিযোগ করেছেন যে, ইডি তাঁকে ‘হ্যারাস’ করার জন্যই ডেকেছে। টাকা তিনি নেননি।
শুক্রবার পাচু দেরি করেই পৌঁছেছিলেন ইডির দফতরে। তাঁকে ফিরে যেতে বলেছিলেন আধিকারিকেরা। এর পর সোমবার ইডির দফতরে উপস্থিত হন পাচু। ১১টায় তাঁকে ইডির দফতরে যেতে বলা হয়েছিল। তার আগেই পৌঁছন প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর। তিনি বলেন, ‘‘ফোন করে আসতে বলা হয়েছিল। ১১টার আগেইএসেছি। অপেক্ষা করেছি ১টা পর্যন্ত। চলে যাচ্ছি।’’ কেন তিনি ইডির দফতরে এসেছেন, সেই প্রশ্নের উত্তরে পাচু জানান, তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় দু’টি মোবাইল এবং দু’টি ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। কোনও নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। সেই মোবাইল এবং ল্যাপটপ থেকে তথ্য কপি করার জন্য তাঁকে ডাকা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ।
এর পরেই পাচু অভিযোগ করেন, টাকার সঙ্গে কোনও যোগ নেই তাঁর। অকারণে ‘হ্যারাস’ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা বুঝতে পেরেছে ভাল করে, কোনও টাকা তছরুপের ধারেকাছে আমি নেই। হ্যারাস করার জন্য এ সব হচ্ছে। ল্যাপটপ নিয়ে চলে এল। মোবাইল নিয়ে এল। উপর থেকে নির্দেশ রয়েছে হ্যারাস করার।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, কারও থেকে কোনও টাকা নেননি। মোবাইল এবং ল্যাপটপ তিনি কিনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সারা জীবন কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি। এক লক্ষ ২৬ হাজার টাকা পেনশন পাই। কিনে নিয়েছি ল্যাপটপ।’’
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছিল, পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের সূত্রে এর আগে ডেকে পাঠানো হয় পাচুকে। রাজ্যে এই মুহূর্তে পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করছে ইডি।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সূত্র ধরেই প্রমোটার অয়ন শীলের নাম প্রকাশ্যে আসে। ঘটনার সূত্রপাত গত মার্চ মাসের ১৯ তারিখ। সল্টলেকে অয়নের অফিস এবং হুগলিতে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। সেই সময় দিস্তা দিস্তা ওএমআর শিটের পাশাপাশি ২৮ পাতার একটি নথি পান তদন্তকারীরা। আপাতদৃষ্টিতে তা প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি মনে করা হলেও পরে দেখা যায় ওই নথির মধ্যে রয়েছে একাধিক পুরসভার প্রার্থী তালিকা এবং সেই সংক্রান্ত সুপারিশ। বাজেয়াপ্ত সেই নথির মধ্যে প্রার্থী তালিকায় থাকা নামের পাশে বেশ কিছু ‘কোড ওয়ার্ড’ পান তদন্তকারী আধিকারিকেরা। বাজেয়াপ্ত ২৮ পাতার নথির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পুরসভার নিয়োগের সংক্রান্ত প্যানেলের প্রার্থীর তথ্যাবলি। উত্তর দমদম, নিউ ব্যারাকপুর, দক্ষিণ দমদম-সহ বেশ কয়েকটি পুরসভার প্যানেলের তথ্যও রয়েছে ইডির হেফাজতে থাকা ওই নথিতে। পুরসভাগুলিতে মেডিক্যাল অফিসার, মজদুর, ওয়ার্ড মাস্টার, ক্লার্ক, অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশিয়ার, হেল্পার, ড্রাইভার-সহ একাধিক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশের তালিকাও ওই নথিতে রয়েছে।
সেই সুপারিশ কে বা কারা করেছেন, সেই তথ্য জানতে গিয়েই ‘কোড’ নামের রহস্যভেদ হয়েছে বলে ইডির দাবি। তদন্তকারীদের আরও দাবি, সাঙ্কেতিক নামের আড়ালেই ছিল সুপারিশকর্তার নাম। সেখানে যেমন মন্ত্রীর নাম রয়েছে, তেমনই সাঙ্কেতিক শব্দে কোথাও ‘অয়নের’ নাম রয়েছে। কোনও ‘কোড’-এর আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ‘চেয়ারম্যান’ শব্দটি। এ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বলতে সংশ্লিষ্ট পুরসভার চেয়ারম্যানকে বোঝানো হয়েছে বলেই তদন্তকারীদের দাবি।