মার্জারবাহিনীর দখলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএম বাংলো।নিজস্ব চিত্র
এক দিকে নাক ঝাড়ছে ঘোড়া। কিছুটা দূরেই বেমালুম ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর। এখানে-ওখানে হাত-পা ছড়িয়ে হাই তুলছে, আড়মোড়া ভাঙছে বিড়াল।
এক লহমায় দেখলে মনে হতে পারে, কোনও পশুশালায় মধ্যে ঢুকে পড়া গিয়েছে। আদতে ঘোড়া-কুকুর-বিড়ালের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চলছে খাস কলকাতায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের বাংলোয়!
লোকসভা নির্বাচনের পরে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বদলি হয়ে আসেন। তার পরেই আলিপুরে জেলাশাসকের বাংলোয় ধীরে ধীরে আসতে থাকে পশুপাখির দল। এখন সেখানে আছে দু’টি ঘোড়া। দেশি ও বিদেশি গোটা কুড়ি কুকুর। সঙ্গে ২০-২২টি বিড়াল। বেশ কিছু পাখি। এবং কয়েকটি ছাগল। এতই তাদের দাপট যে, ওই বাংলোর বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক অফিসকে মানে মানে উঠে যেতে হয়েছে অন্যত্র। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘শিশু শ্রমিক নিরাপত্তা প্রকল্পের দফতর ছাড়াও কয়েকটি প্রশাসনিক অফিস ছিল ডিএমের বাংলোয়। পশুপাখিদের জায়গা করে দিতে সেই সব অফিস জেলা প্রশাসনিক ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, জেলাশাসকের বাংলোর লাগোয়া কয়েক বিঘা জমি এখন পশুদের দখলে চলে গিয়েছে। ওই বাংলোয় জেলাশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জন্য এখন আর কোনও ঘর নেই। সেখানে খাঁচাবন্দি হয়ে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখি। ‘‘জেলাশাসকের বাংলো এখন একটি মিনি চিড়িয়াখানা। ওই বাংলোয় জেলাশাসকের নিজস্ব প্রশাসনিক অফিসেও পরিপাটি সংসার পেতেছে এখন বিড়াল-কুকুরেরা। জেলাশাসক অধিকাংশ সময় আলিপুরের পুলিশ আদালতের প্রশাসনিক অফিসেই বসেন। আগের ডিএম-রা বাংলোর অফিসে বসতেন। প্রয়োজনে সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকও করতেন,’’ বললেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তা।
জেলাশাসকের প্রশাসনিক অফিস-বাংলোর এই হাল কেন? ওই বাংলোর দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ‘ন্যাজ়ারথ ডেপুটি কালেক্টর’ (এনডিসি) শাশ্বত দাঁ। তিনি বলেন, ‘‘ওই বাংলোয় অনেক পশুপাখি রয়েছে। বাংলো দেখাশোনা করলেও ওই সব পশুপাখির বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, উলগানাথন যখন মুর্শিদাবাদে ছিলেন, তখনও তাঁর সরকারি বাসভবনে বহু পশুপাখি থাকত। বদলির পরে সেই সব পশুপাখিই আনা হয়েছে এখানে। জেলাশাসকের স্ত্রী মেঘা মেহতা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার। সেই সংস্থার পশুপাখিদের দৌরাত্ম্যে জেলাশাসকের বাংলো ও অফিসের কর্মচারীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বিড়াল ও কুকুরের মলমূত্রে বাংলো এবং বাংলো চত্বর নোংরা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তার জেরে কয়েক জন কর্মী বাংলোর কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন জেলা প্রশাসনেরই একাংশ।
কী বলছেন জেলাশাসক?
উলগানাথন বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে। অসুস্থ পশুপাখিদের চিকিৎসা করে। ওটা ওর ব্যক্তিগত বিষয়। ধীরে ধীরে সব পশুপাখিকেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’