PC Sorcar Junior

P. C. Sorcar Jr.: ‘অমাবস্যার রাতে স্ট্যাচু ভ্যানিশ করেছিল বন্ধু জাদুকর, দিনের আলোয় দেখিয়েছিলাম আমি’

আশির দশকে একটি লাইভ টেলিভিশন প্রোগ্রামে ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’-কে অদৃশ্য করে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন আমেরিকার জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ১৫:৩১
Share:

জাদুসম্রাট প্রদীপচন্দ্র সরকার ওরফে পিসি সরকার জুনিয়র

রাতের অন্ধকারে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ ভ্যানিশ করে জাদুকর বন্ধু বলেছিলেন, দিনের বেলায় সম্ভব নয়। সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেই প্রকাশ্য দিবালোকে তাজমহল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং আস্ত একটি যাত্রিবাহী ট্রেন ভ্যানিশ করে দেখিয়েছিলেন তিনি। এ কথা আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ অনুষ্ঠান ‘অজানা কথা’য় জানালেন জাদুসম্রাট প্রদীপচন্দ্র সরকার ওরফে পিসি সরকার জুনিয়র। পাশাপাশি, কী ভাবে ট্রেন ভ্যানিশ করেছিলেন, সবিস্তারে তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিলেন তিনি।

আশির দশকে একটি লাইভ টেলিভিশন প্রোগ্রামে ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ অদৃশ্য করে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন আমেরিকার জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড। ওই জাদুকৌশল নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের পরেই দিনের আলোয় স্ট্যাচু ভ্যানিশ করার সিদ্ধান্ত নেন প্রদীপচন্দ্র। আমেরিকার বন্ধু জাদুকরের নামোল্লেখ না করে শনিবারের সান্ধ্য-আড্ডায় তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকার আমার এক বন্ধু জাদুকর স্ট্যাচু অব লিবার্টি ভ্যানিশ করল অমাবস্যার রাতে। আমি নাম বলব না। আপনারা সবাই তাঁকে চেনেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘দিনের বেলায় করোনি কেন? রাতে আমেরিকায় স্ট্যাচু অব লিবার্টি ভ্যানিশ করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের কলকাতায় করতে যেও না। কারণ, কলকাতায় লোডশেডিং হলে এমনিতেই সব ভ্যানিশ হয়ে যায়। আমেরিকার লোক পাওয়ার কাট কী জিনিস, বোঝে না। তাই, তুমি যদি সত্যিই ম্যাজিক করতে চাও, দিনের বেলায় করো।’ ও বলেছিল, দিনের বেলায় সম্ভব নয়। তখন আমি দেখলাম, এই ম্যাজিকটা তো করে দেখা যেতে পারে। আমি ট্রিটমেন্ট শুরু করলাম। এর পরেই যাত্রিবাহী ট্রেন, বেলা একটার সময় তাজমহল আর বেলা দেড়টার সময় ভিক্টোরিয়া ভ্যানিশ করে দেখিয়ে দিলাম।’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে বর্ধমান স্টেশনে ভিড়ে ঠাসা জনতার মাঝে আস্ত একটি ট্রেন (ইনদৌর-অমৃতসর এক্সপ্রেস) ভ্যানিশ করে দিয়েছিলেন প্রদীপচন্দ্র। নব্বইয়ের দশকেই কলকাতার ৩০০তম জন্মদিবসে কয়েক মুহূর্তের জন্য অদৃশ্য করে দিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। এর পর ৪ নভেম্বর, ২০২০। আগরার কাখপুরাতে দুই মিনিটের জন্য তাজমহলও উধাও করে দিয়েছিলেন তিনি।

এরই সঙ্গে ট্রেন-ভ্যানিশের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিলেন পিসি সরকার জুনিয়র। তিনি বলেন, ‘‘পুরো ব্যাপারটাই বিজ্ঞানভিত্তিক। এর মধ্যে কোনও তন্ত্র-মন্ত্র নেই। আমরা দেখি কেন? কারণ, বস্তু থেকে আলোকরশ্মি বিকিরিত হয়ে প্রথমে আমাদের চোখে ঢোকে। রেটিনায় তা প্রতিফলিত হওয়ার পর ওই প্রতিবিম্ব মগজ পড়ে ফেলে। এর পর মগজ পূর্বতন অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে ওই বস্তুকে চিনে ফেলে। এই ভাবে আমরা দেখি। এ বার যদি আমি আলোকরশ্মিকে চোখে ঢুকতে না দিই, যদি ঘুরিয়ে দিই, তা হলে কিন্তু আমরা শূন্যস্থান দেখব। আর ওই জায়গায় যদি অন্য কোনও বস্তুর আলোকরশ্মি আপনার চোখে ঢুকিয়ে দিই, তা হলে কিন্তু আমি ওই দ্বিতীয় বস্তুটিকেই দেখব। কারণ, আলো সরলরেখায় চলে। আলোর গতিপথ বক্র হতে পারে একমাত্র উত্তাপের কারণে। তাই, যদি প্রচণ্ড উত্তাপ তৈরি করা যায়, সে ক্ষেত্রে আলোকরশ্মিও নিজের গতিপথ থেকে সরে আসতে থাকে। এই কারণেই ট্রেন ভ্যানিশ হওয়ার পরের মুহূর্তে ওই এলাকায় প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। আবহাওয়া দফতরও ঘাবড়ে গিয়েছিল। কারণ, তখন তো ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। আসলে আমি যে উত্তাপ তৈরি করেছিলাম, তা ঠান্ডা করার জন্য আশপাশের ঠান্ডা হাওয়া ওই এলাকায় ছুটে এসেছিল।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement