পঞ্চমীর সকালেই জনজোয়ার শহরের পুজোমণ্ডপগুলিতে। —নিজস্ব চিত্র।
হাওয়া অফিস আগেই জানিয়ে দিয়েছে, সপ্তমীর দিন থেকে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে শহর। তাই কোনও রকম ঝূঁকি না নিয়ে পঞ্চমীর সকাল থেকেই ঠাকুর দেখা শুরু করে দিয়েছেন মানুষজন। গত দু’বছর অতিমারির কারণে পুজোর পরিচিত সেই ভিড়, উন্মাদনা দেখা যায়নি। তবে এ বার কোভিড-আতঙ্ক কাটিয়ে পুরনো ছন্দে ফিরতে দেখা যাচ্ছে কলকাতাকে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের সর্বত্রই ছোট-বড় পুজোমণ্ডপগুলিতে রীতিমতো লাইন দিয়ে প্রতিমা দর্শন করছেন সকলে।
নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই যে পুজো শুরু হয়ে যাবে, তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় গত ১ সেপ্টেম্বর বর্ণাঢ্য পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। মহালয়ার আগেই গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে পুজো উদ্বোধন শুরু করে দিয়েছেন তিনি। কলকাতার প্রায় সব বড় পুজোর উদ্বোধন হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় আগেভাগেই মণ্ডপে ভিড় জমাতে দেখা যাচ্ছে দর্শকদের।
পঞ্চমীর সকাল থেকেই উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম বড় পুজোগুলোয় ভিড় দেখা গিয়েছে। দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে উত্তরের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, হাতিবাগান সর্বজনীন, কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দের মতো পুজোগুলির মণ্ডপের সামনে। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক, একডালিয়া, মুদিয়ালি, ত্রিধারার মতো পুজোগুলিতে।
পঞ্চমীর দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোমণ্ডপের সামনে জনজোয়ার। নিজস্ব চিত্র।
দর্শনার্থীদের একাংশের মতে, দক্ষিণ কলকাতায় ফাঁকায় ফাঁকায় ঠাকুর দেখে তাঁরা পরে উত্তর কলকাতার ঠাকুর দেখতে যেতে চান। কেউ কেউ জানিয়েছেন, পরে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করে আগেভাগেই ঠাকুর দেখে নিতে চাইছেন তাঁরা। শুক্রবার সকাল থেকেই যে জনতার এই ঢল নামবে, তা আশা করেননি পুজো উদ্যোক্তারাও। দক্ষিণ কলকাতার এক পুজো কর্তার কথায়, “সচরাচর ষষ্ঠীর আগে সপ্তাহের কাজের দিনে এতটা ভিড়ও হয় না। কিন্তু সকাল থেকেই যে ভিড় আমরা দেখছি, তা অভূতপূর্ব। ভীষণ ভাল লাগছে।”
পুজো উদ্যোক্তাদের আশা, সকালেই যদি এই ভিড় থাকে, তবে রাত গড়ালে জনপ্লাবন আরও বাড়তে পারে। ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পঞ্চমীর দিন থেকেই একের পর এক পুরস্কার আসতে চলেছে বড় পুজোগুলির ঝুলিতে। কলকাতা পুলিশের তরফে সেরা পুজোর শিরোপা পেতে চলেছে মুদিয়ালি ক্লাব। পঞ্চমীর সকালে পুলিশ আধিকারিকরা ক্লাবে এসে ক্লাবকর্তাদের হাতে সেই পুরস্কার তুলে দেন। পুজোর উদ্যোক্তারা পুরস্কার প্রাপ্তিতে খুশি। আনন্দময়ীর আগমনে পঞ্চমীর সকাল থেকেই যে উৎসবে মাতোয়ারা শহর, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের এই ঢল দেখেই।