আবহাওয়া পরিষ্কার থাকায় রবিবার সকাল থেকে ভোট দেওয়ায় জন্য বুথে ভিড় করেন ভোটারা। কিন্তু বেলা গড়াতেই অশান্তির খবর আসতে শুরু করে। রাজপুর সোনারপুর পুরসভার বিদ্যানিধি স্কুলে বুথে ঢুকে বাম, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীর এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ। বহরমপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জিটিআই স্কুলে ৪৬ নম্বর বুথের ভেতরে কংগ্রেস এজেন্টকে ব্যপক মারধরের অভিযোগ ওঠে।
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
রাজ্য জুড়ে অশান্তির আবহে ১০৮টি পুরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হল। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, ইভিএম ভাঙচুর, বোমাবাজি, প্রার্থীকে মারধর, কিছুই বাদ গেল না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়েছেন বিরোধী এবং নির্দল প্রার্থীরা। তবে বাদ যাননি শাসকদলের প্রার্থীও।
আবহাওয়া পরিষ্কার থাকায় রবিবার সকাল থেকে ভোট দেওয়ায় জন্য বুথে ভিড় করেন ভোটারা। কিন্তু বেলা গড়াতেই অশান্তির খবর আসতে শুরু করে। রাজপুর সোনারপুর পুরসভার বিদ্যানিধি স্কুলে বুথে ঢুকে বাম, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীর এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ। বহরমপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জিটিআই স্কুলে ৪৬ নম্বর বুথের ভেতরে কংগ্রেস এজেন্টকে ব্যপক মারধরের অভিযোগ ওঠে।
জলপাইগুড়ি ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থীকে বুথ থেকে বার করে দেবার অভিযোগ উঠল পুলিশের এক ডিএসপি-র বিরুদ্ধে। সকালে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হলেও কিছুক্ষণ পরেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় জলপাইগুড়ি হাই স্কুলের বুথে। কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয় বাইরের লোকজন বুথের ভেতরে রয়েছে। বেলা যত বাড়তে থাকে বাড়তে থাকে অভিযোগের সংখ্যা।
রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৮৯ নম্বর বুথে নির্দল প্রার্থী মহুয়া দাস। নিজস্ব চিত্র
কাঁথিতে সৌমেন্দু অধিকারী বুথে বুথে ‘অবৈধ ভাবে’ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এই অভিযোগ তোলেন তৃণমূল প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরি। তিনি মৌখিক ভাবে কমিশনে অভিযোগও জানান। কাঁথির ১৩নম্বর ওয়ার্ডে মন্ত্রী অখিল গিরির সঙ্গে সৌম্যেন্দু আধিকারীর দেহরক্ষীদের সঙ্গে একপ্রস্ত বচসাও হয়। বুথে বুথে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে সৌমেন্দুর গাড়িও আটকায় পুলিশ। উতপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটাপাড়াও। বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে এক তৃণমূল কর্মীকে চড় মারার অভিযোগ উঠছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর মজিলপুর পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রাজ্যের যে ২০টি জেলায় ভোট হয়েছে, কম-বেশি অধিকাংশ জেলা থেকেই বিরোধী প্রার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ এসেছে। তবে অন্য ছবি ছিল শান্তিপুর পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেন অভিযোগ। অভিযোগের তির সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি পুরসভায় গাড়ি ভাঙচুর।
একাধিক জায়গায় ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে ঢুকে ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে প্রার্থী-সহ আরও দু’জনকে আটক করে পুলিশ। ভোট চলাকালীন বুথে ঢুকে ইভিএম ভাঙচুরের পাশাপাশি বোমাবাজির অভিযোগে ওঠে রেল শহর খড়্গপুরে। প্রতিবাদে তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষই অবরোধে বসে। বনগাঁ ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের রিগিং, ছাপ্পা, ভোট বুথ দখল করেছে এই অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করে বিজেপি প্রার্থীরা। রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৮৯ নম্বর বুথে নির্দল প্রার্থী মহুয়া দাসের শাড়ি খুলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
খড়্গপুরে ইভিএম ভাঙচুর।
উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাসুদেবপুরে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। অন্য দিকে ধুলিয়ান পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৫১ নম্বর বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশ যেতেই পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটবৃষ্টি শুরু হয়। বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠে। ইটের আঘাতে জখম বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। ফরাক্কার এসডিপিও ওয়াসিম খানের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে।
ভোটের খবর করতে বিভিন্ন জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন একাধিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা। তবে বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি হলেও ভোটদান অব্যহত থাকে। দুপুর ১টার সময় রাজ্যের ১০৮ টি পুরসভায় দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৪৯.৯১শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ে পূর্ব মেদিনীপুরে (৫৯.১৯ শতাংশ)। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে দার্জিলিংয়ে (৩৬.২২ শতাংশ)। সেই হার বজায় থেকেছে বিকাল ৩টেতেও। মোট ভোট পড়েছে ৬৫.২০ শতাংশ, ৭৫.৭৬ শতাংশ ভোট পূর্ব মেদিনীপুরে। দার্জিলিংয়ে ভোট পড়ছে ৪৭.৮২।