প্রয়াত সংগ্রাম ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
করোনা সঙ্কটের সময়ে রাজ্যে মরণোত্তর অঙ্গদান। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা বিধি মেনে অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যা সারা দেশে নজিরবিহীন বলেই মনে করছে চিকিৎসকমহল।
ভাটপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টিভ সংগ্রাম ভট্টাচার্য পথদু্র্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পান। প্রথমে তাঁকে কল্যাণীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসাপাতলে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণার পর তাঁর অঙ্গদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করে পরিবার। কিন্তু করোনা আবহে এই অঙ্গদানে অনেকটাই ঝুঁকি নিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
সংগ্রামের লিভার, দুই কিডনি, হৃদযন্ত্র, ত্বক, চোখ গ্রিন করিডর করে ওই বেসরাকারি হাসপাতাল থেকে নিয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিতে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ৩১ বছর বয়সি সংগ্রামের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণার পর বিশেষজ্ঞ কমিটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। তারা সম্মতি জানানোর পর, এ বিষয়ে পদক্ষেপ শুরু হয়। রিজিওনাল অরগ্যান ট্রান্সপ্লান্ট অ্যান্ড টিস্যু অর্গানাইজেশন (রোটো)-এর মাধ্যমে অঙ্গগ্রহীতার খোঁজ শুরু হয়।
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহ পরেও স্থিতিশীল প্রণববাবু, রয়েছেন ভেন্টিলেশনে
ওই বেসরকারি হাসপাতালেই আগরতলার এক প্রৌঢ়ে শরীররে লিভার প্রতিস্থাপন হচ্ছে। গতকাল, রবিবার রতেই তিনি বিমানে কলকাতায় চলে আসেন। এর পাশাপাশি লিলুয়ার এক যুবককেও রাতে নিয়ে আনা হয় সেখানে। তাঁর শরীরে সংগ্রামের কিডনি প্রতিস্থাপিত হবে।
অন্য একটি কিডনি যাচ্ছে এসএসকেএমে এক রোগীর শরীরের প্রতিস্থাপিত করা হবে। এসএসকেএম হাসপাতালেই সংগ্রামের ত্বক দান করা হবে। একটি বেসরকারি হাসপাতলে সংগ্রামের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন হবে এক ব্যক্তির শরীরে। একটি নামী চোখের হাসপাতালে দান করা হচ্ছে সংগ্রমের কর্নিয়া। যাঁরা এই অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত অর্থাৎ গ্রহীতা থেকে চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট নেগেটিভও আসে।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এগরার বিধায়ক সমরেশ দাসের
ওই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ অগস্ট সংগ্রাম বাড়ি ফেরার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। বাইকের স্ট্যান্ড খোলা ছিল। রাস্তার বাম্পারে স্ট্যান্ড লেগে ছিটকে পড়েন রাস্তায়। হেলমেট পরা থাকলেও তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। গতকাল রবিবার ব্রেন ডেথ হয় সংগ্রামের। তার পরেই তাঁর পরিবার মরণোত্তর অঙ্গদানে সম্মতি দেন বলে জানিয়েছেন ওই বেসরকারি হাসপাতালের এত আধিকারিক।