নবান্ন অভিযানের অন্যতম উদ্যোক্তা শুভঙ্কর হালদার। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি-কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান। সেই অভিযানের আহ্বান জানানো পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের তিন মুখ প্রকাশিত হয়েছিলেন গত শুক্রবার। তাঁদেরই এক জন, নবদ্বীপের শুভঙ্কর হালদারের বিরুদ্ধে তৃণমূলের পক্ষে একাধিক অভিযোগ তোলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে নবদ্বীপ থানায় শ্লীলতাহানির মামলা রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। সোমবার তা নিয়ে প্রশ্ন শুনেই মেজাজ হারালেন শুভঙ্কর। আঙুল তুলে ‘চোপ’ বলে প্রশ্নকারীকে থামাতে চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশিই, চাপের মুখে স্বীকার করে নেন যে, তিনি আরএসএস-এর সদস্য। শুভঙ্কর বলেন, ‘‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন আরএসএস। আর সঙ্ঘের স্বয়ংসেবক হিসাবে আমি গর্বিত।’’
শুভঙ্করের সঙ্গী সায়ন লাহিড়িও মেনে নেন যে, এক সময়ে তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং পরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন শিক্ষকতা করলেও তিনি ছাত্র সমাজের মুখ।
মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে সোমবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিল পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ। প্রথম দিন তিন ‘ফেসবুক বন্ধু’ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সোমবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয় সাত। কোনও ছাত্রী নেই কেন, প্রশ্ন ওঠায় এক ছাত্রীও তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানানো হয়। কিন্তু শুভঙ্করকে নিয়ে রবিবার প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীও একই অভিযোগ তোলেন। সোমবার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই ক্রুদ্ধ গলায় শুভঙ্কর দাবি করেন, ‘‘বাংলায় বিরোধী রাজনীতি করতে গেলে সকলের বিরুদ্ধেই শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে।’’ তাঁর বিরুদ্ধে ৩০ থেকে ৩২টি মামলা রয়েছে বলেও শুভঙ্কর জানান। তিনি আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সে প্রশ্নের জবাব শান্ত ভাবে দিলেও ধর্ষণের অভিযোগ সংক্রান্ত প্রশ্নে শুভঙ্কর বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শাসকের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতে গেলে জেল খাটতে হয়। আমি তিন বার জেল খেটেছি।’’ প্রথম দিন নিজেকে ছাত্র হিসাবে পরিচয় দিলেও সোমবার শুভঙ্কর বলেন, ‘‘আমি শিক্ষকতা করি। সেই সঙ্গে ছাত্রও।’’ আর হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের অভিযান বা তার পরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হলে বা আমার প্রাণহানি হলে তার জন্য দায়ী থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
পুলিশের অনুমতি না মিললেও মঙ্গলবার তাঁরা নবান্ন অভিযানে যাবেনই বলে জানান শুভঙ্কররা। সায়ন বলেন, ‘‘আমাদের কাছে পুলিশের তরফে করা অনেক প্রশ্নেরই উত্তর নেই। কত মানুষের জমায়েত হতে পারে, কত গাড়ি আসতে পারে আমাদের জানা নেই।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১টায় কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার এবং হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে হবে জমায়েত। এর পরে মিছিল যাবে নবান্নের দিকে। পুলিশ যেখানে মিছিল থামাবে, সেখানেই দাঁড়িয়ে যাওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সকলের কাছে এই আর্জিও জানাচ্ছি যে, নবান্নের কাছাকাছি কেউ পৌঁছে গেলেও তাঁরা যেন ভিতরে প্রবেশ না করেন। কোনও কিছু ভাঙচুরও যেন না করা হয়।’’
তৃণমূলের পক্ষে ‘রাম-বামের অভিযান’ বলা হলেও, এই কর্মসূচি থেকে আগেই দূরত্ব তৈরি করেছে সিপিএম। সোমবার দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘এই ছাত্র সমাজের কথা আগে কেউ শুনেছেন? ১০ তারিখ থেকে এরা কোথায় ছিল? আসলে শুভেন্দু লাশ সরবরাহের রাজনীতি করতে চাইছেন। যা তিনি শিখেছেন মমতার স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন।’’
বিজেপিও এই মিছিলে ‘দলগত’ ভাবে থাকবে না বলেই জানিয়েছে। তবে অভিযানে সমর্থন জানিয়ে সংঘাত হলে চিকিৎসা সংক্রান্ত সহযোগিতা করার ঘোষিত প্রস্তুতি রাখছে পদ্মশিবির। বিজেপি কি মনে করছে মঙ্গলবার বড় গোলমাল হতে পারে? বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘অতীতে আমাদের নবান্ন অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকেই প্রস্তুতি রাখছি। পুলিশ যে দমনপীড়ন মূলক আচরণ করবে, তার ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি।’’ প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই নবান্ন অভিযান ঘিরে যাতে ‘বিশৃঙ্খলা’ না হয়, তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। কলকাতা ও হাওড়ায় পুলিশ যেমন যান নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছে, তেমনই রাজ্যের প্রধান সচিবালয় নবান্নের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও নানা ব্যবস্থা করা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই— মিছিল যাতে নবান্নের কাছাকাছি যেতে না পারে।