মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানের তিন উদ্যোক্তা। (বাঁ দিক থেকে) প্রবীর দাস, সায়ন লাহিড়ি এবং শুভঙ্কর হালদার। —ফাইল চিত্র
নবান্ন অভিযানের তিন উদ্যোক্তা তাঁদের কর্মসূচিকে ‘অরাজনৈতিক’ বলে দাবি করলেও শাসক তৃণমূল আগাগোড়া দাবি করে এসেছে যে, এর নেপথ্যে বিজেপি রয়েছে। রবিবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের শাসকদলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র তরফে দাবি করা হয়, ধর্ষণকাণ্ডের বিরুদ্ধে নবান্ন অভিযানের এক হোতাই ধর্ষণে অভিযুক্ত! তবে অভিযুক্ত ওই ছাত্রনেতা শুভঙ্কর হালদারের দাবি, তৃণমূল ভয় পেয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজ’। কোনও সংগঠন নয়, তাঁরা সমাজের প্রতিনিধি— এই মর্মেই নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন নবান্ন অভিযানের ডাক নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করা তিন ছাত্র। এই তিন ছাত্রের অন্যতম শুভঙ্কর। তাঁর বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুলে রবিবার সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। তৃণাঙ্কুরের পোস্টে দাবি করা হয়, এক সময় টিএমসিপি করলেও ধর্ষণ এবং অপহরণের মামলায় জড়়িয়ে যাওয়ায় শুভঙ্করকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। শুভঙ্করের বিরুদ্ধে কলেজে ভাঙচুর চালানো, আইসির গায়ে হাত তোলার অভিযোগও তোলা হয়েছে।
তৃণাঙ্কুর নবান্ন অভিযানের অন্যতম উদ্যোক্তার ‘রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত ইতিহাস’ তুলে ধরে দাবি করেন যে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করার পর মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেন শুভঙ্কর। পরে আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-র নবদ্বীপ শাখার সভাপতি হন।
আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল ‘অভিযুক্ত’ শুভঙ্করের সঙ্গে। তিনি টিএমসিপি করতেন বলে যে দাবি তৃণাঙ্কুর করেছেন, তা উড়িয়ে দেন। তবে তিনি যে এক সময় এবিভিপি করতেন, তা স্বীকার করে নেন শুভঙ্কর। জানান, সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তিনি অনেক দিন আগেই এবিভিপি ছেড়ে দিয়েছেন। নিজের বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় হিসাবে ‘অরাজনৈতিক’ শব্দটিই ব্যবহার করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে শুভঙ্কর বলেন, “তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তারা মিথ্যা কথা ছড়িয়ে আমাকে এবং আমাদের সঙ্গীদের ভয় পাওয়াতে চাইছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, অভিযোগের সপক্ষে কোনও প্রমাণ ওরা দেখাতে পারবে না।”
গত শুক্রবার কলকাতার প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে শুভঙ্কর-সহ তিন ছাত্র জানান যে, মঙ্গলবার কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার এবং হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে দুপুর ১টায় হবে জমায়েত। এর পরে নবান্নের উদ্দেশে যাবে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দু’টি পৃথক মিছিল। সেই মিছিলে কত লোক হবে, কোন পথ ধরে মিছিল এগোবে, সে ব্যাপারে কোনও ইঙ্গিতই এখনও পর্যন্ত মেলেনি। ফলে অন্ধকারে পুলিশও। কোনও নির্দিষ্ট সংগঠনের ডাক না থাকায় পুলিশ যে বেশ বিড়ম্বনায়, তা জানিয়ে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষে শনিবার একটি নোটিস পাঠানো হয় নবান্ন অভিযানের এই তিন উদ্যোক্তাকে।