শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত লোকজনের জন্য এ রাজ্য ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হয়ে উঠেছে কি না, সেই প্রশ্নে বিতর্ক শুরু হয়েছে আগেই। এ বার সন্দেহভাজন জঙ্গির নাম একাধিক জায়গায় ভোটার তালিকায় তোলার জন্য দায়ী নির্বাচন-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিডিও-দের গ্রেফতার এবং বিএলও (বুথ লেভ্ল অফিসার)-দের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, জেলাশাসকের (তিনিই জেলায় নির্বাচনী আধিকারিক) কাছে এই বিষয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক অবশ্য জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত শাব শেখের নাম ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া ও নওদা বিধানসভা এলাকায়। কেরল থেকে গ্রেফতার হয়েছে শাব। জঙ্গি-যোগ ও ভোটার তালিকার প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্রয়ে এই কার্যকলাপ বাড়ছে। এরা তো তৃণমূলের হয়ে ভোট লুট করে! সভা, মিছিল হলে লোক ভরায়। গ্রেফতার তো করেছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। কলকাতা পুলিশের কোনও কৃতিত্ব নেই।’’ এই সূত্রেই তাঁর দাবি, ‘‘দেড় বছর ধরে হরিহরপাড়ায় থেকে ভারত-বিরোধী জিগির তুলে মাদ্রাসা চালাচ্ছিল। ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিল। যে বিডিও ওকে নাম তুলিয়েছিলেন, তাঁকে ইউএপিএ দিয়ে গ্রেফতার করা উচিত! ওঁকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না?
সরব হয়েছে অন্য বিরোধীরাও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বাংলায় ভোটের নামে প্রহসন হয়। বারবার কমিশনকে জানানো সত্ত্বেও ভোটার তালিকায় জল থেকেই যায়। জাল নথিপত্র দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে শাসক দলের মদতে। আর রাজ্য সরকারের যে সব আধিকারিক, কর্মীরা এই বেআইনি কাজ করেছেন, তাঁদের ফল ভুগতে হবে!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের প্রশ্ন, ‘‘একটা শাব শেখ ধরা পড়েছে বলে ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু বাংলায় ভোটার তালিকায় ১৭ লক্ষ নাম আছে, যারা একাধিক জায়গায় নথিভুক্ত! বাকিদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা হবে?’’
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বিরোধী দলনেতাকে বিঁধেছেন, ‘‘কেউ নিয়ম ভেঙে ভোটার তালিকায় নাম তুলে দিলে নিশ্চয়ই আইনত ব্যবস্থা হোক। কিন্তু তার আগে শুভেন্দুকে বলতে হবে, বিএসএফের পাহারা পেরিয়ে তারা ঢুকল কী করে? তার পরে তারা ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে। তাই আগে বিএসএফের গাফিলতির জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, শুভেন্দুরা বলুন!’’
বিতর্কের মুখে হরিহরপাড়ার বিডিও ছেরিং জাম ভুটিয়া বলেছেন, ‘‘২০২৩ সালে নওদা থেকে হরিহরপাড়ায় ওই ব্যক্তির ভোটার তালিকায় নাম পরিবর্তন হয়েছে। আমরা খোঁজ-খবর নিয়েছি। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেটা ভাল বলতে পারবেন।’’ মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্রের বক্তব্য, ‘‘আমরা যথাযথ পদক্ষেপ করছি। ইতিমধ্যে চলতি মাসের ১২ তারিখ নাম বাতিলের জন্য ফর্ম৭ জমা পড়েছে। এর পরের তালিকায় নাম থাকবে না।’’