Mamata Banerjee

ত্রাণের ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ শুনে বার্তা মমতার

রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, জমতে থাকা নানা অভিযোগ এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলতে পেরেছেন বাম, বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০২:১১
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

করোনা পরিস্থিতি ও আমপান বিপর্যয়ের পরে ত্রাণের ব্যবস্থা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে অভিযোগ করে আসছিল বিরোধীরা। সর্বদল বৈঠক ডেকে সেই অভিযোগের বাষ্প বার করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীই। কার্যক্ষেত্রে বুধবারের বৈঠকে আক্রমণাত্মক মেজাজেই অভিযোগ জানালেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের অভিযোগের নির্যাস থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এই কৌশলের ফলে এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী যেমন প্রতিদিনের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত করার সুযোগ পেলেন, তেমনই নিজের দল ও প্রশাসনকেও একটা বার্তা দিলেন। আপাত ভাবে এটা তাঁর ‘রাজধর্ম’ পালনও বটে।

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, জমতে থাকা নানা অভিযোগ এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলতে পেরেছেন বাম, বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে সতর্ক হয়ে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এর ফলে আপাতত কিছু দিন রাজ্য প্রশাসন সময় পাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার। প্রশাসন আশ্বাস মোতাবেক কাজ করছে কি না, তা না দেখে বিরোধীরা নতুন করে ঝাঁপাতে পারবে না। আবার প্রশাসনও চাপে থাকবে। এই কৌশলের প্রতিফলনই এ দিনের বৈঠকে ধরা পড়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

জেলায় জেলায় ত্রাণ ঘিরে কেমন অরাজকতা চলছে, সেই অভিযোগ এ দিনের বৈঠকে তুলেছিলেন বাম নেতারা। বিজেপি নেতারা তার সঙ্গেই যোগ করেন ত্রাণের কাজে তাঁদের জনপ্রতিনিধি ও কর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ। কংগ্রেস নেতারা দাবি করেন করোনা ও অন্যান্যে রোগের চিকিৎসায় আরও পরিকাঠামো বাড়ানোর। সূত্রের খবর, বৈঠকে উপস্থিত মুখ্যসচিবকে বেশ কয়েক বার সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেন বিরোধী নেতারা। তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীর সঙ্গে বারকয়েক বাদানুবাদও হয় বিরোধী নেতাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেন মুখ্যমন্ত্রীই। বৈঠক শেষে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের দাবি, তাঁদের বক্তব্য মেনেই নিয়েছে রাজ্য সরকার। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, বিরোধীদের কথা রাজ্য সরকার সত্যিই মান্যতা দিচ্ছে কি না, পরে তাদের কাজ দেখেই তা বুঝতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: দলবাজি, বঞ্চনা চলবে না: সর্বদল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী

প্রশাসন এবং শাসক দলের সব কাজ যে ঠিক হচ্ছে না, তার উল্লেখ এ দিন নিজেই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের পরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলের থেকেও চার জনকে তাড়িয়ে দিয়েছি। জেলা পরিষদের আমাদের এক কর্মাধ্যক্ষ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কষ্ট করে সরকার টাকাগুলো দিচ্ছে, যাদের সত্যি ক্ষতি হয়েছে তাদের জন্য। কিন্তু যাঁরা তালিকা তৈরি করছেন, তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত যাঁরা বাদ গিয়েছেন, তাঁদের নাম তুলুন। মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিচ্ছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘দায়িত্বে আছি বলেই কেউকেটা নই, এটা মনে রাখবেন! অন্যায় করার অধিকার প্রশাসন বা রাজনৈতিক দল কেউই দেয়নি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ এমনি কাগজে আবেদন করলেও তা স্বীকার করতে হবে। দরকারে ছবি দিয়ে দিন।’’

আরও পড়ুন: রাজনীতির তরজার মাঝে আক্ষেপ ছাপিয়ে শিল্পের দাবি

বৈঠকে এ দিন প্রথমে সিপিএমকে বলার সুযোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রাণে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগের কথা তোলেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রী এক রকম নির্দেশ দেন আর নিচু তলায় অন্য রকম কাজ হয়, পূর্ত দফতরের অহেতুক বাড়তি খরচের প্রসঙ্গও আনেন তিনি। পরে সুজনবাবু বলেন, ‘‘বিডিও এবং প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে হবে। অভিযোগ থাকলে পুলিশকেও তা নিতে হবে। এর পরেও কাজ না হলে আমরা সবাই মিলে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’ ত্রাণের কাজে বিজেপি নেতাদের বাধা দেওয়ার সরব হন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলের কর্মীদের আক্রান্ত ও খুন হওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন। পরে দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমার বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা বসানো হচ্ছে। আমাদের নেতাদের ত্রাণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন! পুলিশমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে এই সবই বলেছি।’’ করোনা রোগীর মৃত্যু ‘চেপে দেওয়া’র অভিযোগও তুলেছিলেন দিলীপবাবু। বাড়ি পুনর্নির্মাণের আবেদনপত্র নিয়ে জটিলতার কথা বলতে গিয়ে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে খানিকা তর্ক হয় মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য অভিযোগ শোনেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement