প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে পেট্রল ও ডিজ়েলের শুল্ক কমানোয় সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। একই মত তেল ডিলারদের সংগঠনগুলিরও। তাদের মতে, শুল্ক বাড়িয়ে যে পরিমাণ আয় কেন্দ্র করেছে, ছাড় তার তুলনায় অনেক কম। বিজেপি অবশ্য নরেন্দ্র মোদীর ‘দেওয়ালি উপহার’কে সামনে রেখে রাজ্যের সরকারের কাছেও শুল্ক কমানোর দাবি তুলেছে।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার টুইটে মন্তব্য করেছেন, ‘ভারত সরকার পেট্রলে ৫ টাকা ও ডিজ়েলে ১০ টাকা শুল্ক কমানোর ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে দেওয়ালির উপহার দিয়েছেন। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে রাজ্য সরকারেরও ছাড় দিয়ে দাম আরও কমিয়ে আনা উচিত’। জ্বালানির বাড়তি দাম নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদের সময়ে বিজেপি নেতারা অবশ্য আগাগোড়া বলে এসেছেন, তেলের দাম সরকারের হাতে নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। এখন কেন্দ্র শুল্ক ছাড় দিতেই সেই বিজেপি নেতারাই সরকারের ‘কৃতিত্ব’ আদায়ে তৎপর!
তৃণমূল নেতা ডেরেক ও‘ব্রায়েন পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য খুশির দেওয়ালি বটেই! গত বছরে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে ৬৫% আর কমানো হল ১৫%! এই বছর শুধু এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শুল্ক বাবদ সরকারের আয় গত বছরের তুলনায় ৩৩% বেড়েছে। কোভিড-পূর্ব সময়ের কথা ধরলে বাড়তি আয় ৭৯%’। কেন্দ্রকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চত্রবর্তীও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মন্দের ভাল হয়েছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা ছাড় দেওয়া কি কমানো হল? উপনির্বাচনের ফল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলেই কি এখন কমানো হল? কেন্দ্রে এই সরকার আসার পরে পেট্রো-পণ্য থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ কোটি টাকা বাড়তি লুঠ করা হয়েছে!’’ তবে কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যেরও করের ভাগে কিছু ছাড় দেওয়া উচিত বলে সুজনবাবুদের দাবি।
শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও ইন্ডিয়ান অয়েল ডিলার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট জন মুখোপাধ্যায় ও ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি প্রসেনজিত সেনের দাবি, সাম্প্রতিকালে শুল্ক যতটা বেড়েছে, তার তুলনায় হ্রাস কম। জনের কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে যে হারে দাম বাড়ল, তার একটা অংশ কমল বলে বলা যায়। আশা করব, তা আরও কমবে।’’ আর প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘গত বছরে লিটার পিছু কেন্দ্র পেট্রলে ১০ টাকা ও ডিজ়েলে ১৩ টাকা উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছিল। কিন্তু কমল যথাক্রমে ৫ ও ১০ টাকা। আগামী দিনে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়লে সেই যুক্তিতে ফের আবার তা বাড়বে না তো?’’ তাঁর দাবি, কালী পুজো উপলক্ষে আজ, বৃহস্পতিবার তেল সংস্থাগুলির ডিপো বন্ধ থাকায় এ দিনের মধ্যে সব পাম্পই বেশি দামে কিনে তেল ভর্তি করে ফেলেছে। ফলে, দাম কমার সুযোগের পূর্ণ সুফল গোড়ায় তারা পাবে না। তেল সংস্থাগুলিও এ বার টানা দর কমালে তবে কিছুটা সুরাহা মিলবে।
জন জানাচ্ছেন, চড়া দরের জন্য ডিজ়েলের বিক্রি অনেকটা কমে গিয়েছে। গণপরিবহণ কম থাকায় অনেকেই নিজেদের দুই বা চার চাকার ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে বাধ্য হওয়ায় পেট্রলের বিক্রির খুব একটা হেরফের হচ্ছে না। তবে তাঁর মতে, যে ভাবে রাজ্যের মূল্য যুক্ত করের (ভ্যাট) হিসেব কষা হয়, তাতে কেন্দ্রীয় শুল্ক কমলে ভ্যাটের হার একই থাকলেও পাম্পে তেলের দাম তার চেয়েও বেশি কমার কথা।