নিশীথের কর্মসূচি ঘিরে তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তপ্ত দিনহাটার বুড়িরহাট। অভিযোগ, এর পরেই নিশীথের গাড়িতে হামলা চালানো হয়। ছবি: সুমন মণ্ডল
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের চর্চায় এল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলার অভিযোগে সরব বিরোধীরা শনিবার সরাসরি আঙুল তুলেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিও তুলেছে বিজেপি। তৃণমূল অবশ্য বলেছে, নিজেদের পুরনো কৌশলমতো পঞ্চায়েত ভোটের আগে আরও এক বার রাজ্য প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি করতে চাইছে বিরোধীরা।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শাসক-বিরোধী চাপানউতোর নতুন নয়। তবে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও সম্প্রতি এ ব্যাপারে তাঁর কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে এক বিবৃতিতে রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, যথা সময়ে হস্তক্ষেপ করা হবে। সেই প্রেক্ষিতে এ দিনের এই ঘটনা বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। ঘটনার পরেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কনভয়ে হামলার অভিযোগও জানিয়ে এসেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দলের তরফে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করা দরকার। এ ব্যাপারে রাজ্যপালের সদর্থক ভূমিকা আশা করছি।’’ গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার কনভয়ে হামলার প্রসঙ্গও টেনেছেন বিজেপি নেতারা। সেই জলও অনেক দূর গড়িয়েছিল।
নিশীথের কনভয়ে ‘হামলা’ ও কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি সামনে আসতে পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূলও। দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ের মন্তব্য, ‘‘২০১১ সাল থেকে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে এই একই পরিকল্পনা করে চলেছে বিজেপি। রাজ্যের মানুষ তার জবাবও দিয়েছেন।’’ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তোলা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বুথে লোক নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের জনস্বার্থ-বিরোধী কাজের জন্য দলের সমর্থন কমছে। তাই নির্বাচন এলেই কেন্দ্রীয় বাহিনী, কমিশন আর রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা বলা বিজেপির অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’’
এ দিন সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে বলেছি, যে ভাবে দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে আক্রান্ত হয়েছেন, তাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দিনহাটার ওসি দাঁড়িয়ে থেকে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এই ঘটনার আদৌ তদন্ত হবে? শাসক দলের কেউ জড়িত থাকলে তাঁর শাস্তি হবে?’’ শুভেন্দুর পাল্টা হুমকি, ‘‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ওরা শুরু করেছে, আমরা শেষ করব।’’ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের মন্ত্রীদেরও গাছে বেঁধে রাখার নিদান দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দিনহাটার ওই গোলমালের ঘটনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দিকেই আঙুল তুলেছে তৃণমূল। সুখেন্দুশেখর বলেন, ‘‘দলীয় সূত্রে যে খবর এসেছে, তাতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ও কিছু গুন্ডা নিয়ে এলাকায় পরিকল্পিত ভাবে হিংসা ছড়িয়েছেন নিশীথ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই দলটি এলাকায় ঢোকার সময়ে বোমা ফাটিয়েছে। কারণ বিএসএফের গুলিতে স্থানীয় এক রাজবংশী যুবকের মৃত্যুর পরে স্থানীয় মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন।’’
পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘এ রাজ্যে বিরোধীদের রাজনীতি করার অধিকারই নেই। আমাদের উপরেও আক্রমণ হয়েছে। গোটা রাজ্যেই জুলুমের রাজনীতি চলছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই সবই তৃণমূল-বিজেপির দখলদারির রাজনীতির ফল। তা ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ খাটের তলায় টাকার খোঁজ পায় না, বোমা-বন্দুকেরও খোঁজ পায় না। শুধু বিরোধীদের আক্রমণ করে, হুঁশিয়ারি দেয়। ওঁকে পুলিশমন্ত্রী রেখে কোনও নির্বাচনই সম্ভব নয়।’’