অমিত মিত্র।
বাজেট বিতর্কে বিরোধী এবং শাসক দলের মধ্যে বাগবিতণ্ডায় শনিবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিধানসভা। দফতরভিত্তিক বরাদ্দ কমানোর অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা। তথ্য দিয়ে সেই অভিযোগ খণ্ডন করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি যা বলছি সেটাই ঠিক। আপনাদের তথ্য ভুল।’’ যদিও অস্বচ্ছতার পাল্টা অভিযোগ তুলে বিধানসভা কক্ষে বাজেট বই ছুড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, এ বারের বাজেটে আবাসন, শিল্প, শ্রমিক-কল্যাণ, সংখ্যালঘু, উচ্চ ও বিদ্যালয় শিক্ষার মতো একাধিক খাতে গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি, শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত সেস বাবদ যে অর্থ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত, তা-ও তুলে নিয়ে ট্রেজারিতে জমা দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরে তিনি বলেন, ‘‘গত এবং চলতি আর্থিক বছরের বাজেট বিবৃতিতে লিখিত ভাবে যে তথ্য রয়েছে, তার ভিত্তিতেই আমরা অভিযোগ করেছি। অর্থমন্ত্রী বাজেট বিবৃতির পরিবর্তে অন্য কোন কাগজ দেখিয়ে ব্যাখ্যা দেবেন, তা আমরা মানব না।’’
জবাবি ভাষণে অর্থমন্ত্রী জানান, আগের মতো বাজেটে এখন আর পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা বহির্ভুত খাতের ভাগ থাকে না। সে জায়গায় উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রশাসনিক খরচের ব্যাখ্যা রাখা হয়। ফলে এই দু’টি খাতের বরাদ্দ অর্থ যোগ করলেই দফতরভিত্তিক মোট বরাদ্দের হিসেব পাওয়া যাবে। অমিতবাবু দাবি
করেন, বিভিন্ন দফতরে বাম আমলের তুলনায় বহু গুণ বরাদ্দ বেড়েছে।
গত অর্থবর্ষের তুলনাতেও তা
বাড়ানো হয়েছে।
বিতর্কে রাজ্য সরকারের ঋণ প্রসঙ্গ তোলেন বিরোধীরা। সুজনবাবু জানান, গত ৬৪ বছরে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার গত ন’বছরে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। শূন্যপদে নিয়োগ না-করা, মহার্ঘভাতা না-দিয়ে সরকার প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা বাঁচিয়েছে। তার পরেও এত ঋণ কেন করতে হয়েছে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিধানসভার বাইরে সুজনবাবু বলেন, ‘‘সুদ বাবদ যে ২৩ হাজার কোটি টাকা রাজ্যকে শোধ করতে হয়েছে, তার মধ্যে সাড়ে চারশো কোটি টাকা বিগত সময়ের ঋণের জন্য। তা হলে বাকি ঋণ কি মেলা-খেলা-উৎসবের জন্য?’’
অমিতবাবুর ব্যাখ্যা, বন্ড ছেড়ে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকা ঋণ করেছিল বিগত বাম সরকার। ১০ বছর পরে সেগুলির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছিল। তারই আসল বাবদ ২ লক্ষ কোটি এবং
সুদ বাবদ দেড় লক্ষ কোটি মিলিয়ে মোট সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বর্তমান সরকার। তিনি জানান, উন্নয়নের জন্য নেওয়া ঋণের একটা অংশ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
কর্মসংস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুজনবাবুর অভিযোগ, সিঙ্গুরে প্রকল্প হতে না-দিয়ে যুবকদের স্বপ্ন ধ্বংস করেছে তৃণমূল। অমিতবাবু পাল্টা জানান, বানতলায় এখন ২ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ চাকরি করেন। আরও পাঁচ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।