বুথে এজেন্ট বসানো নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে বিরোধী পক্ষ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় এ বার দ্বিগুণ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে বিরোধীরা। বিজেপি, সিপিএম তো বটেই, ২০১৮-র তুলনায় ২০২৩ সালের এই ভোটে কংগ্রেস প্রায় তিন গুণ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। রাত পোহালেই শনিবার ভোট। কিন্তু তার আগের দিন বিরোধী শিবিরে উদ্বেগ— বুথে এজেন্ট বসানো যাবে তো! বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস— তিন দলের নেতারাই একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, যেখানে যেখানে প্রার্থী দেওয়া গিয়েছে, সে সব জায়গায় সর্বত্র বুথে এজেন্ট বসানো মুশকিল।
বিরোধী নেতাদের কথায় এই প্রসঙ্গে দু’টি বিষয় উঠে এসেছে। এক, ভোটের দিন সকালে ‘মক পোল’ থেকে সন্ধ্যায় ব্যালট বাক্স ‘সিল’ করা পর্যন্ত শাসকের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে যুঝে যাওয়ার লোক নেই। দুই, তাঁদের দাবি ‘সন্ত্রাস’-এর আবহও এজেন্ট সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার একটা বড় কারণ। আর বুথে এজেন্ট না থাকলে কী হয়, গোটা রাজ্যই সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। প্রকাশ্যে অবশ্য বিরোধীরা কেউই এই ‘দুর্বলতা’র কথা বলছে না। কারণ, তাতে দলীয় কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা।
শুক্রবার রাজ্য বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘আমাদের মনে হচ্ছে, উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের অধিকাংশ জায়গাতেই এজেন্ট দেওয়া যাবে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র তা সম্ভব হবে না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘এ বারের ভোটে প্রার্থী দেওয়াটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভোটের দিন পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করে স্থানীয় মানুষের মুডের উপর। তবে নানা কারণেই সব বুথে এজেন্ট বসানোর বাস্তব পরিস্থিতি নেই। এই সত্য অস্বীকার করে লাভ কী!’’ সিপিআইয়ের এক তরুণ নেতা আবার ঘরোয়া আলোচনায় রসিকতা করলেন, ‘‘আমাদের সবটাই এখন ফেসবুক-কেন্দ্রিক। বুথে ‘ফেস’ নেই।’’ কংগ্রেস যেমন শুধুমাত্র নিজেদের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ এলাকাগুলিতেই বিশেষ নজর দিচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা খোলাখুলিই বলছেন, ‘‘আমাদের পাখির চোখ মালদহ, মুর্শিদাবাদ আর উত্তর দিনাজপুরের একাংশ। সেখানে আমরা সমস্ত শক্তি উজাড় করে দেব। যদি তৃণমূল মনে করে বাধা দেবে, তা হলে যা হওয়ার তা-ই হবে!’’
তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি তো অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, বিরোধীদের লোক নেই। যেখানে যেখানে ওরা প্রার্থী দিয়েছে, সেখানে প্রার্থীদের বাড়ির লোকেরাও তৃণমূলকে ভোট দিয়ে যাবে। কারণ, গ্রামে সব পরিবার দিদির সরকারের পরিষেবা পাচ্ছে। এতেই কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!’’
এ বার পঞ্চায়েতে সওয়া দু’লক্ষের বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে। যাকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গণতন্ত্রের ‘নতুন মডেল’ হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার অভিষেক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছিলেন, অতীতে কখনও এত মনোনয়ন দাখিল হয়নি। একই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তথ্যও বলছে, অতীতের চেয়ে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীরা অনেক বেশি মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে। বস্তুত, বিরোধীরাও মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে এক প্রকার সন্তুষ্টিই প্রকাশ করেছেন।
তবে এজেন্ট নিয়ে সমস্যা থাকছেই। অনেকের মতে, স্থানীয় স্তরে শাসক দল ও প্রশাসনের সঙ্গে অনেকেরই রুটি-রুজি জড়িয়ে। ফলে অনেকেই বিরোধী মনোভাবাপন্ন হলেও ‘পেটের তাগিদে’ তাঁরা ‘ঝুঁকি নেবেন না। তাঁদের এ-ও বক্তব্য যে, পঞ্চায়েত ও পুরসভার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। তাই স্থানীয় স্তরের নির্বাচনে এ সব হয়েই থাকে। লোকসভা বা বিধানসভার ক্ষেত্রে ততটা হয় না।