কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির কু-মন্তব্যের বিরুদ্ধে যাঁরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁদেরই নাম বারবার উঠছে কু-তালিকায়! তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কয়েক দিনে একাধিক বার কুকথা বলে বিতর্কে জড়িয়েছেন। কখনও বিজেপি নেতার উদ্দেশে অশালীন শব্দ উচ্চারণ করেছেন, কখনও হাতের মুদ্রা করে প্রকাশ্যে দেখিয়েছেন ‘বাঁশ দেওয়া’ কাকে বলে! সেই তালিকাতেই এ বার নাম উঠল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিরোধীরা বলছে, দলনেত্রীর পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদ!
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ইদানীং নিয়মিত তৃণমূল নেত্রীকে তোপ দাগছেন। কলকাতায় অমিত শাহের সভা থেকে একটি বলিউডি ছবির অনুষঙ্গ টেনে তিনি বলেছিলেন, ২০১৬-য় ‘ভাগ মমতা ভাগ’ দেখতে হবে! সম্পর্কে সিদ্ধার্থনাথ প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নাতি। হুগলির চণ্ডীতলায় একটি সভায় সেই সিদ্ধার্থনাথকে নিশানা করেই কল্যাণ বলেছেন, “লালবাহাদুর শাস্ত্রী যদি বেঁচে থাকতেন এবং জানতেন তাঁর এমন নাতি হবে, তা হলে বিয়েই করতেন না!” অশালীন মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ানোর ইতিহাস কল্যাণের বহু দিনের। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি একাই দোষী নন। সিদ্ধার্থনাথের বিরুদ্ধে ঠিক এই মন্তব্যই ব্যবহার করে চলেছেন তৃণমূল নেতারা। দলের ‘যুবরাজ’ এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি দু’টি সভায় একই কথা বলেছেন।
শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণের সঙ্গে ররিবার রাতে অবশ্য আর যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বিজেপি-র সম্পাদক রীতেশ তিওয়ারির মন্তব্য, “বারে বারে বিভিন্ন কুকথা বলেই কল্যাণবাবু মানুষের নজর কেড়েছেন। যে দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর মুখে সর্বদা কুকথার স্রোত বইছে, তার অন্য নেতাদের কাছে এর চেয়ে বেশি আর কিছু আশা করা যায় না!” কিন্তু তৃণমূলের নেতারা তো বেশ কয়েক দিন আগে একই কথা বলেছিলেন। রীতেশের দাবি, “সে বারও দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ওই মন্তব্যের নিন্দা করেছিলেন।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও প্রশ্ন তুলেছেন, তৃণমূলের নেতা-সাংসদদের কাছে এ ছাড়া আর কী আশা করা যায়? তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা অবশ্য বলছেন, “কল্যাণ বা আমাদের দলের অন্যেরা এই সংক্রান্ত যা বলেছেন, তাকে কি কুকথার পর্যায়ে ফেলা যায়? এ ভাবে আপত্তি তুললে তো কোনও কথাই বলা যাবে না!” শাসক দলের নেতারা এমন ব্যাখ্যা দিলেও প্রশ্ন থাকছে, যে শব্দ বা বাচনভঙ্গি অনায়াসে এড়িয়ে গিয়েও প্রয়োজনীয় বার্তা দেওয়া যায়, বারবার কেন সে সব কথাই বেছে নেন রাজনীতিকেরা? বাম জমানায় অনিল বসু, বিনয় কোঙার বা ক্ষমতা বদলের পরে সিপিএমের আনিসুর রহমান থেকে তৃণমূলের কল্যাণ, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখছে রাজ্য রাজনীতি। আর সে সবই ছাপিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল, সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে মহিলাদের ধর্ষণের হুমকি দিয়ে। মুখে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলে এবং কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে সেই তাপসকেই দু’দিন আগে সংসদ চত্বরে কুকথার প্রতিবাদে ধর্নায় দেখা গিয়েছিল!