অঘোষিত ‘কার্ফু’, সরব বিরোধীরা

বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী ২০ নভেম্বর। সেই অধিবেশনে রাজ্যে গণতন্ত্রের উপরে আঘাতের অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চায় বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০২
Share:

কামারহাটিতে সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়। বোলপুরে কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। যিনি আবার বিরোধী দলনেতাও বটে। কোচবিহারে বিজেপি-র দিলীপ ঘোষ। শাসক দলের হাতে একের পর এক জনপ্রতিনিধির হেনস্থা হওয়ার ঘটনায় সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, রাজ্যে গণতন্ত্রের উপরে ‘অঘোষিত কার্ফু’ চলছে। বিরোধী নেতৃত্বের প্রশ্ন— নির্বাচিত বিধায়কেরা এলাকার কোনও ঘটনার খবর পেয়ে বা অন্যত্র কোনও কর্মসূচিতে যেতে পারবেন না, এ আবার কেমন কথা!

Advertisement

বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী ২০ নভেম্বর। সেই অধিবেশনে রাজ্যে গণতন্ত্রের উপরে আঘাতের অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চায় বিরোধীরা। অধিবেশন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সর্বদল বৈঠক বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি, সব বিরোধীই বয়কট করেছে। পরে কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠক শেষে সিপিএমের মানসবাবু, কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীরা বিষয়টি তুলেছিলেন। সরকার পক্ষের তরফে অবশ্য এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে নির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস মেলেনি। তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট বিধায়কেরা তাঁর কাছে অভিযোগ জানালে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

বিধায়কেরা আক্রান্ত হলে বিধানসভায় স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনতে পারেন। সাম্প্রতিক কালে কয়েক বার বিধায়কদের অভিযোগ পেয়ে স্পিকার বিমানবাবু সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশকর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন। স্পিকার এ দিনও বলেন, ‘‘আমার কাছে অভিযোগ জানালে আমি দেখব।’’ কামারহাটি হাসপাতালে গিয়ে হেনস্থার ঘটনা স্পিকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন মানসবাবু এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। স্পিকার তখন ছিলেন বাংলাদেশে। তবে প্রশ্ন উঠছে, বিধায়কদের ক্ষেত্রে স্পিকার বিধানসভার অভিভাবক হিসাবে কিছু ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে বলতে পারেন ঠিকই। কিন্তু বিধানসভার বাইরে বিরোধী দলের কেউ কোথাও গিয়ে বাধা বা হেনস্থার মুখে পড়বেন না, তা স্পিকার কী ভাবে নিশ্চিত করবেন? সেই কাজ তো প্রশাসনের।

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, বিজেপি-কেই যদি তৃণমূল এখন প্রধান প্রতিপক্ষ ভেবে থাকে, তা হলে বাম-কংগ্রেসকে কিছুটা পরিসর তাদের দেওয়ার কথা। অথচ কার্যক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে সব বিরোধীকে। তাতে তৃণমূল স্তরে সব বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকেরা শাসক দলের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে যেতে পারছেন। অনেকে আবার এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাম আমলেও শাসক সিপিএমের তাড়ায় মানস ভুঁইয়া, কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর মতো বিরোধী দলের বিধায়কদের ধানক্ষেতে দৌড়তে হয়েছিল প্রাণভয়ে। তাই এমন ঘটনা রাজ্যে প্রথম নয়। আবার বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের পাল্টা প্রশ্ন, তা হলে আর পরিবর্তন কোথায়? মুকুলবাবুর কথায়, ‘‘বাম জমানায় সকলের ভোটাধিকার ছিল না। এখন কোনও বিরোধীর জন্য কোনও পরিসরই নেই!’’

মান্নানের বক্তব্য, ‘‘বিরোধী দলনেতা হয়েও আমার কোনও কর্মসূচিতে যাওয়ার অধিকার নেই? পুলিশের সামনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দেখেও কেউ কিছু করছে না। তবে যত ওরা আটকাবে, তত আমরা যাব!’’ বিজেপি-র দিলীপবাবুর দাবি, ‘‘তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। তাই গুন্ডামি করে, পুলিশ দিয়ে বিরোধীদের আটকানোর চেষ্টা করছে।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু অবশ্য মান্নান, বিকাশ ভট্টাচার্যদেরই কটাক্ষ করে বরং মন্তব্য করেছেন, ওঁরা অভিনয় করতে যাচ্ছেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement