মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বিজেপির পতন শুরু হয়েছে— পুজো উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে মঙ্গলবার এ কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মাথার উপর সরকার আর কয়েকটা এজেন্সি নিয়ে ভাবছে সব কিছু করে ফেলবে। ওদের পতন শুরু হয়েছে। টুপ করে খসে পড়বে।’’
পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনে এ দিন অন্তত ১৫টি মণ্ডপের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। একডালিয়া এভারগ্রিন, হিন্দুস্থান পার্ক, ত্রিধারার মতো একাধিক মণ্ডপ উদ্বোধন উপলক্ষে বক্তৃতায় সাম্প্রতিক রাজনীতির কথা টেনে এনেছেন। একই সঙ্গে বিঁধেছেন বিজেপি ও সিপিএমকে। রাজ্য বিজেপি অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ‘মূল্যহীন’ বলে দাবি করেছে।
একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো উদ্বোধনে প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
একডালিয়ার পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নারদ কাণ্ডে তাঁর গ্রেফতারের কথা টেনে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘এত দিনের রাজনীতিক, তাঁকে গ্রেফতার করল! মানুষটা চলে গেছেন। খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন। অসম্মানিত হয়েছিলেন।’’ প্রয়াত মন্ত্রীর স্ত্রী ছন্দবাণীকে পাশে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি গিয়ে কিছুক্ষণ বসেছিলাম, মনটা যাতে শান্ত হয়। ববি (মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম) বলছিল, জেলে নিয়ে যাওয়ার পরে সুব্রতদার বুকে একটা সমস্যা হচ্ছিল। সুব্রতদাকে ববি বলেছিল, আপনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন সুব্রতদা বলেছিলেন, না রে, মেনে নিতে পারছি না। দুটো গুলি থাকলে যারা অসম্মান করেছে তাদের মারতাম। তারপর নিজেকে মারতাম।’’ এই সূ্ত্রেই মমতার মন্তব্য, ‘‘আমাদের অনেককেও আজ এই অসম্মান ভোগ করতে হচ্ছে।’’
হিন্দুস্থান পার্কের মণ্ডপে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিরোধীদের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মমতা বলেন, ‘‘শুধু নেতিবাচক চিন্তা। এই নেতিবাচক আচরণ আমাদের তলানিতে নিয়ে গিয়েছিল।’’ রাজ্যের দুর্গোৎসবকে ইউনেস্কোর দেওয়া স্বীকৃতি এবং সাংস্কৃতিক পর্যটনে শ্রেষ্ঠ গন্তব্য হিসেবে রাজ্যের পাওয়া শিরোপার উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে মমতা বলেন, ‘‘ইতিবাচক হোন। যদি কেউ মনে করে থাকে বিজেপির আর সিপিএমের দুটো ডিজিটাল-এ যা ইচ্ছা বলে যাব আর মানুষ আমাদের কথা বিশ্বাস করে নেবে, সেটা ভুল।’’ পরে ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপের উদ্বোধনে রাজ্যের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘জলস্বপ্ন’, ‘বাংলার বাড়ি’, ‘১০০ দিনের কাজ’, ‘গ্রামীণ সড়ক’ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় স্বীকৃতির উল্লেখ করে তাঁর সরকারের ‘সাফল্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘‘১০টা কাজ করলে একটা ভুল হতে পারে। ভুল আছে বলেই তো সংশোধন আছে। একটা ছোট্ট ভুল হলে তা নিয়ে শুরু হয়ে যায়।’’ তিনি ফের বলেন, ‘‘আমরা বদলা চাইনি বলেই ক্ষমতায় এসে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিইনি। এটা যেন ওরা (সিপিএম) ভুলে না যায়।’’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এক সময় তাঁর (মুখ্যমন্ত্রী) এই কথা মানুষ গ্রহণ করেছিল। তাঁরা জীবন দিয়ে এখন তার মূল্য দিচ্ছেন। তাই দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে রাজনীতি করার চেষ্টায় এ বার তিনি আর সফল হবেন না।’’