মুম্বই থেকে ধৃত এক ব্যক্তি। — ফাইল চিত্র।
বিশ্ববাংলা লোগো বসানো ‘ওয়েস্টবেঙ্গল পরিবহণ ডিপার্টমেন্ট সুরক্ষা কমিটির’ নাম দেওয়া প্যাড দেখিয়ে অতিরিক্ত বালি, পাথরের বহনের কারবার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। কত টন পর্যন্ত অতিরিক্ত পণ্য বহন করা যাবে সেটাও লেখা রয়েছে ওই প্যাডে। শক্তিগড়ের পরিবহণ দফতরের এক ইনস্পেক্টরের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে মুম্বই থেকে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ‘ট্রানজিট রিমান্ডে’ বর্ধমানে আনা হচ্ছে তাঁকে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানা হবে।’’
তদন্তকারীদের দাবি, এটা আসলে ‘পারানি’। যা দেখালে অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়িতেও নজর পড়বে না কোনও দফতরের। ট্রাক নিয়ে বল্গাহীন ছুটবেন চালক। কিন্তু কোনও কোনও সময় পচা শামুকেও পা কাটে! গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে চেক পোস্টে নথি পরীক্ষা করার সময়ে বীরভূমের ইলামবাজার থেকে কলকাতামুখী এক ট্রাকের চালক বিশ্ববাংলার লোগো দেওয়া ওই রকমই প্যাডের পাতা বার করে পরিবহণ দফতরের ইনস্পেক্টরকে দেখান। তিনি তা পাঠান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। জেলা পরিবহণ দফতর ও জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছ থেকে জানতে চায়, তারা ওই ধরনের কোনও প্যাড বিলি করেছে কি না। রাজ্য পরিবহণ দফতর জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে তদন্ত করে এফআইআর করার নির্দেশ দেয়। তদন্তে নেমে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের মোটর ভেহিক্যাল ইনস্পেক্টর অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করে আমাদের কাছে ওই কুপন পাঠান। এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। ওই চক্রের মাথাকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কোনও ভাবেই দুষ্টচক্র চালাতে দেওয়া হবে না।’’
পরিবহন দফতর সূত্রে জানা যায়, দফতরের আঞ্চলিক কর্তা (বর্ধমান) অনুপম চক্রবর্তী ওই ট্রাকের মালিক, উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটের অভিজিৎ ঘোষ ও চালক শুভদীপ বিশ্বাসের জবানবন্দি নেন। জানা যায়, বসিরহাটের নাজিমুল ইসলামের কাছ থেকে প্যাডের পাতাটি কিনেছিলেন তাঁরা। প্রতিটি পাতার দাম পড়েছিল ২৫ হাজার টাকা। তার বিনিময়ে ১০ টন পর্যন্ত অতিরিক্ত পণ্য বহন করার ‘অধিকার’ পান ট্রাকের চালক। কয়েক দিন আগে পরিবহণ দফতরের ইনস্পেক্টর শক্তিগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মূল অভিযুক্ত নাজিমুল মুম্বইয়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। জেলা পুলিশের বিশেষ দল সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে। ‘ট্রানজিট রিমান্ডে’ বর্ধমানে আনা হচ্ছে তাঁকে। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানা হবে।’’
পরিবহণ দফতরের দাবি, রাজস্ব এড়িয়ে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যাওয়ার চক্র চলছে রাজ্য জুড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে খণ্ডঘোষ ও জামালপুর পুলিশও ভুয়ো ই-চালান দিয়ে বালির ট্রাক নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।