বৈঠকের আগে জেএমবি জঙ্গি ধৃত শহরে

লালবাজার জানিয়েছে, সোমবার কলকাতা স্টেশনের কাছে উল্টোডাঙার রাইচরণ সাধুখাঁ রোডে মহম্মদ আবুল কাশেম নামে জেএমবি-র ওই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪০
Share:

আবুল কাশেম

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ১৯ আসামির শাস্তি হয়েছে গত সপ্তাহে। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র শীর্ষ নেতাকে সবে গারদে পোরা হয়েছে। এর মধ্যেই ওই জঙ্গি সংগঠন পুনর্গঠনে কলকাতায় বৈঠক ডেকেছিল সদস্যেরা। সেই বৈঠকের আগেই খাস কলকাতায় ধরা পড়ে গেল জেএমবি-র এক সক্রিয় সদস্য।

Advertisement

লালবাজার জানিয়েছে, সোমবার কলকাতা স্টেশনের কাছে উল্টোডাঙার রাইচরণ সাধুখাঁ রোডে মহম্মদ আবুল কাশেম নামে জেএমবি-র ওই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। ধৃতের বাড়ি বর্ধমানের মঙ্গলকোটের দুরমুট গ্রামে। তার কাছ থেকে পেন ড্রাইভ, ভয়েস রেকর্ডার, বেশ কিছু জেহাদি নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এনআইএ বা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা কাশেমের বাড়িতে হানা দেওয়ার পর থেকে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। তাকে এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়। সরকারি আইনজীবী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, বাংলাদেশের পাশাপাশি এ দেশেও নাশকতার ছক কষছিল কাশেমরা। তাকে ১৪ দিন পুলিশি হাজতে রেখে জেরা করার অনুমতি দেন বিচারক।

পুলিশি সূত্রের খবর, বছর বাইশের কাশেম বেলডাঙা কলেজে পড়ার সময়েই জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়ে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত মৌলানা ইউসুফ তাকে নিয়োগ করেছিল। পরে এ দেশে জেএমবি-র চাঁই মহম্মদ ইজাজের সংস্পর্শে আসে সে। বেলডাঙার মেসে ও

Advertisement

মঙ্গলকোটের বাড়িতে সংগঠনের সদস্যদের সাইবার প্রশিক্ষণ দিত কাশেম। ইউসুফ ধরা পড়ে এনআইএ-কে জানায়, তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ রয়েছে কাশেমের জিম্মায়।

কমবেশি ২০ জন জঙ্গি কাশেমের বাড়ি বা মেসে সাইবার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। গোয়েন্দারা জানান, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের আগে এবং পরে জেএমবি-র বিভিন্ন শীর্ষ নেতার যাতায়াত ছিল কাশেমের বাড়িতে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে গোয়েন্দারা জানান, জেএমবি-র ‘আমির’ ইজাজ ধরা পড়লেও সালাউদ্দিন সালাহের মতো সংগঠনের শীর্ষ নেতারা এখনও পলাতক। মূলত তাদের নির্দেশেই কাশেমরা সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করার জন্য কলকাতায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়। গোয়েন্দাদের জেরায় কাশেম জানায়, এ দিন বৈঠকের পরেই ট্রেনে দক্ষিণ ভারতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। দক্ষিণ ভারতের কোথায় লুকিয়ে থাকা যায়, বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তও নেওয়ার কথা ছিল।

এক তদন্তকারী জানান, ২০১৬ সালের পরে ইজাজের সঙ্গে গয়ায় থাকতে শুরু করে কাশেম। উত্তরবঙ্গ মডিউলের অন্যতম সদস্য ছিল সে। ইজাজ ও কাশেমকে জেরা করে ওই মডিউলের প্রায় এক ডজন সদস্যের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের খোঁজে এ দিনই বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছেন এসটিএফের গোয়েন্দারা।

কাশেম জেএমবি-র জঙ্গি, এটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না দুরমুট গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা। তাঁরা মনে করছেন, কাশেম ফেঁসে গিয়েছে। বাসিন্দারা জানান, কাশেমের পরিবার খুবই নিরীহ ও গরিব। বাবা আবুল কালাম প্রতিবন্ধী। চাষ করেই সংসার চলে। এক পড়শি বলেন, ‘‘ওই পরিবারের কেউ কোনও দিন মশা মেরেছে কি না সন্দেহ। সেই পরিবারের ছেলে জেহাদি, এটা মানতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে।’’

তবে স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের কয়েক দিন পরেই উধাও হয়ে যায় কাশেম। গত পাঁচ বছরে তাকে এলাকায় দেখেননি কেউ। খাগড়াগড়-কাণ্ডের অন্যতম চাঁই, মঙ্গলকোটের কৃষ্ণবাটী গ্রামের ইউসুফ, কুলসুনো গ্রামের আবুল কালাম ও কওসরকে গ্রেফতার করার পর থেকেই কাশেমের উপরে নজর ছিল এসটিএফের। দুরমুটে ইউসুফের মামার বাড়ি। সেই সূত্রে তাদের পরিচয়। কৃষ্ণবাটী ছাড়ার আগে ইউসুফ একটি ল্যাপটপ ও মোবাইলের চিপ রাখতে দিয়েছিল কাশেমকে। তার খোঁজে কাশেমের বাড়িতে তল্লাশিও চালিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement