সিদো-কানহো সভাঘরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে), পিয়ালগেড়িয়ায় শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
হুল দিবসের পুনরাবৃত্তি আদিবাসী দিবসে।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রবিবার, আদিবাসী দিবসের রাজ্য স্তরের সরকারি অনুষ্ঠানে গেলেন না পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। অথচ একই সময়ে ঝাড়গ্রামে বেসরকারি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন তিনি। ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে নেদাবহড়া অঞ্চলের পিয়ালগেড়িয়া ফুটবল মাঠে তাঁর অনুগামীদের আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে শুভেন্দু বলেও দিলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম শহরের অনুষ্ঠানে আমার ডাক ছিল, কিন্তু ফিরে গিয়ে তমলুকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন স্মরণে একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে। তাই ফিরে যেতে হবে। তাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’
সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে না পারায় ক্ষমা চাইলেন শুভেন্দু। তা শুনে পার্থ বললেন, ‘‘শুভেন্দু এলে ভাল লাগত। এই বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করতে চাই না। আমি বিতর্ক করতে ভালবাসি না।’’ তবে শুভেন্দুর অনুপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক থামছে না। কারণ, তিনি মন্ত্রী। তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলির সদস্যও বটে। এদিন ঝাড়গ্রাম জেলাপ্রশাসনের সিদো-কানহো সভাঘরে রাজ্যস্তরের আদিবাসী দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনেও পার্থের সঙ্গে নাম ছিল শুভেন্দুরও। তবে মূল সরকারি অনুষ্ঠানে গরহাজিরার এই প্রবণতা নতুন নয়। ৩০ জুন হুল দিবসের রাজ্য স্তরের সরকারি অনুষ্ঠান হয়েছিল ঝাড়গ্রামে। ওই অনুষ্ঠানের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে পার্থ ও শুভেন্দুর নাম ছাপা হয়েছিল। কিন্তু পার্থ এলেও ওই দিন শুভেন্দু সরকারি অনুষ্ঠানে আসেননি। উল্টে একই সময়ে রামগড়ে একটি আদিবাসী ক্লাবের আয়োজনে হুলদিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। সম্প্রতি তৃণমূলের সমন্বয় কমিটির বৈঠকেও গরহাজির ছিলেন শুভেন্দু।ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের দলহীন-জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা।
অনুষ্ঠানে শুভেন্দু হাজির ছিলেন প্রায় আধঘণ্টা। বক্তৃতা করেছেন প্রায় ১৪ মিনিট। কিন্তু বক্তৃতায় তৃণমূল সরকার বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম একবারও মুখে আনেননি। যা বলেছেন তা হল, ‘‘সমগ্র আদিবাসী সমাজ যাঁরা মূলবাসী, তাঁদের শিক্ষা তাঁদের সংস্কৃতি তাঁদের এগিয়ে যাওয়া, বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান তাদের ভাল রাখার যে সংগ্রাম শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ঝাড়গ্রাম নয়, গোটা ভারতবর্ষ, গোটা পৃথিবীব্যাপী এই সংগ্রামে আপনাদের বন্ধু হিসেবে আপনাদের সেবক হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী ছিল, আছে, থাকবে।’’ বক্তৃতা শেষে কয়েক সেকেন্ড ধামসা বাজিয়ে মঞ্চ থেকে নামেন শুভেন্দু। লাগোয়া স্টলের সামনে কয়েকটি ক্লাবের প্রতিনিধির হাতে খেলার সরঞ্জাম তুলে দিয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যান পরিবহণমন্ত্রী। সংবাদমাধ্যমকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি তিনি।
এ দিন আড়াইটে নাগাদ পার্থ প্রথমে অরণ্যশহরের ওল্ড সেটেলমেন্ট মোড়ে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন। এরপরে বিকেল ৩টা নাগাদ ডিএম অফিস চত্বরে জেলা প্রশাসনের সিদো কানহো সভাঘরে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন পার্থ। আদিবাসীদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার কী করছে এবং আগামী দিনে কী কী পরিষেবা মিলতে পারে সরকারি অনুষ্ঠানে তা সবিস্তারে বলেছেন পার্থ। শুভেন্দুও বলেছেন, আদিবাসীদের জন্য তিনি কী কী করেছেন। ত্রাণ পৌঁছনো থেকে চাকরির ব্যবস্থা করা— সবই ছুঁয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু।
শিয়রে ভোট। আদিবাসী আবেগকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলেন দুই মন্ত্রী। তফাত রইল মঞ্চে। দৃষ্টিভঙ্গিতে।