মঞ্চে মৎস্য নিগমের এমডি সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
নতুন দায়িত্ব নিয়েই ঘোরতর বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মৎস্য দফতরের অধিকর্তা ছিলেন তিনি। মৎস্য উন্নয়ন নিগমের দায়িত্ব নেন সোমবার।
মঙ্গলবার নলবনে ‘কর্মচারী উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংগঠন’ নামে নিগমের একটি কর্মী সংগঠনের সভায় যোগ দেন সুব্রতবাবু, যে-সংগঠনটি ওই দিনেই আত্মপ্রকাশ করে। শুধু তা-ই নয়, ‘অন ডিউটি’ অর্থাৎ কাজে হাজির দেখিয়েও কাজ বন্ধ রেখে বিভিন্ন জেলার কর্মীরা ওই সভায় হাজির ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে তৎপর, সেই সময়েই একটি কর্মী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নিগমের শীর্ষ কর্তার সক্রিয় উপস্থিতি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
নিগম সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি প্রকল্পের প্রায় ৭০০ কর্মী মঙ্গলবার নলবনের সভায় যোগ দেন। মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি-সহ সংগঠনের ব্যানারের সামনেই সুব্রতবাবু প্রায় ১০ মিনিট বক্তৃতা দেন। কর্মদিবসে ‘অন ডিউটি’ দেখিয়ে সব কর্মীকে ওই সভায় যোগ দিতে বলা হয়েছিল। বেলা ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত সভায় কর্মীদের জন্য ছিল দুপুরের মাছভাত, তরকারির ঢালাও আয়োজন। ওই সভার জন্য বর্ধমান, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি ও কলকাতার ১৩টি প্রকল্পের অধিকাংশ কর্মী কর্মস্থলে গরহাজির থাকায় প্রায় সব কাজই বন্ধ ছিল। এমনকি ওই সভায় নিগমের প্রায় সব আধিকারিক ও কর্মী ব্যস্ত থাকায় সে-দিন সন্ধ্যায় নিউ টাউন মেলা প্রাঙ্গণে ‘আহারে বাংলা’ উৎসবে নিগমের স্টল দিতেও দেরি হয়। দেরিতে স্টল বসায় গত বছরের তুলনায় বিক্রি অর্ধেক কমেছে বলে নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে।
কাজের দিনে এক জন সরকারি আমলার কোনও কর্মী সংগঠনের সভায় যোগ দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? সুব্রতবাবুর জবাব, ‘‘এ বিষয়ে যা বলার মৎস্যমন্ত্রী বলবেন।’’ মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও উপস্থিত ছিলেন মঙ্গলবারের সভায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের বহু প্রকল্পে বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের দ্বন্দ্বে নিগমের উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নিগমের উন্নয়ন ও সুরক্ষার স্বার্থেই সব কর্মী সংগঠনকে একত্র করে একটি সংগঠন তৈরি করা হল।’’ মঙ্গলবার নলবনে সভা হলেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রকল্পের কোনও কাজ ব্যাহত হয়নি বলে দাবি করেছেন মৎস্যমন্ত্রী। কিন্তু কাজের দিনে দূরদূরান্ত থেকে কর্মীদের ‘অন ডিউটি’ দেখিয়ে সংগঠনের সভায় আসতে বলা কি কর্মসংস্কৃতির পরিপন্থী নয়? এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন চন্দ্রনাথবাবু।
কর্মচারী উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিনোদ মিশ্র জানান, ওই দিন ১৩টি প্রকল্পের প্রায় ৭০০ কর্মীর খাওয়াদাওয়া ও পরিবহণ খাতে খরচ হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ টাকা। সব খরচই সংগঠন বহন করেছে। কর্মদিবসে কর্মী সংগঠনের এ-হেন সভার আয়োজন প্রসঙ্গে রাজ্যের এক অবসরপ্রাপ্ত আইএএস বলেন, ‘‘কাজের দিনে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে কর্মী সংগঠনের সভার আয়োজন পুরোপুরি বেআইনি। এই ধরনের সভায় নিগমের কোনও পদস্থ কর্তার উপস্থিতিও নিয়মবিরুদ্ধ।’’