গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কয়েক দিন আগে যা বলেছিলেন, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের পেশ করা বাজেটে তা-ই প্রতিফলিত হয়েছে। তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটকে এই ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, বুধবার বাজেটের উপর তিনিই তৃণমূলের তরফে লোকসভায় প্রথম বক্তৃতা করবেন। অর্থাৎ, তৃণমূলের তরফে বাজেট নিয়ে মোদী সরকারকে প্রথম আক্রমণ করবেন দলের সেনাপতি।
রাজ্য বিজেপির বর্ধিত কর্মসমিতির সভায় সম্প্রতি শুভেন্দুর একটি মন্তব্য নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ বলার দরকার নেই। বলতে হবে, জো হমারি সাথ, হম উনকে সাথ।’’ সে কথাই উল্লেখ করে অভিষেক মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী কয়েক দিন আগে যে কথা বলেছিলেন, আজকের বাজেটে সেটাই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’’ সেই প্রসঙ্গেই বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ক্ষেত্রে ‘হাত উপুড়’ করার প্রসঙ্গ টেনেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার বাঁচাতে বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, যারা সঙ্গে রয়েছে, তাদের জন্যই কেবল বরাদ্দ!’’ সেই সঙ্গে তৃণমূলের সেনাপতি এ-ও বলেছেন, ‘‘কোনও রাজ্যের বরাদ্দের বিষয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু কেন বাংলাকে বারংবার বঞ্চিত করা হবে?’’
নির্মলার পেশ-করা বাজেটকে ‘জ়িরো গ্যারান্টি এবং জ়িরো ওয়ার্যান্টি’ বলে কটাক্ষ করেছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ। বাজেট পেশের পরে সংসদ ভবন চত্বরে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি জমানায় বাংলা ক্রমাগত বঞ্চিত এবং নিপীড়িত হয়েছে। এ বার বাংলা থেকে ১২ জন সাংসদ পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু বাংলার জন্য কোনও বরাদ্দ নেই!’’
তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদীকে ‘পরনির্ভরশীল’ হয়ে সরকার গড়তে হয়েছে। এ ব্যাপারে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টির সমর্থন মোদীকে আবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে মূল সহায়তা করেছে। ঘটনাচক্রে, এ বারের বাজেটে বিহার এবং অন্ধ্রের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু প্রস্তাব রেখেছেন নির্মলা। যা অভিষেকের ব্যাখ্যায়, ‘‘সরকার টিকিয়ে রাখতে শরিকদের উপঢৌকন দেওয়া হয়েছে।’’
গত রবিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, ‘ছোট বিরতি’ শেষে তিনি সংগঠনের রাশ আবার নিজের হাতে নিচ্ছেন। ফলে তাঁর সাময়িক ‘দূরে সরে থাকা’ নিয়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, তাতে ইতি পড়েছে গত রবিবার। বাজেট নিয়ে আলোচনায় দলের প্রথম বক্তা হিসেবে তিনিই যে থাকছেন, তা-ও যে ভাবে অভিষেক নিজেই জানিয়েছেন, তা-ও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকে। উল্লেখ্য, স্পিকার নির্বাচনের সময়ে অভিষেককে দিল্লির রাজনীতিতে ‘সক্রিয়’ দেখিয়েছিল। কংগ্রেস একতরফা নাম ঘোষণা করায় কোনও রকম ভণিতা না করেই তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সেনাপতি। পরিস্থিতি বুঝে রাহুল গান্ধী লোকসভার মধ্যেই অভিষেকের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। তার পরে রাহুলের সঙ্গে ফোনে কথা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। সেই সময়ে অনেকেই বলেছিলেন, অভিষেককে জাতীয় স্তরে এই ভূমিকায় কখনও দেখা যায়নি। যে কাজ করতে এত দিন দেখা যেত তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সে কাজে আরও ‘আগ্রাসী এবং আক্রমণাত্মক’ ভূমিকা নিয়েছিলেন অভিষেক। ফলে বুধে অভিষেক কী বলেন, সে দিকে প্রত্যাশিত ভাবেই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।