Omicron

Omicron In West Bengal: কাঠামো আছে, চিন্তা ঢিলেঢালা ভাব নিয়ে

ওমিক্রনের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা বার্তা সব জেলাকে এর মধ্যেই দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

‘ওমিক্রন’ সামলাতে কি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি?

Advertisement

সরকারি তথ্য মতে, উৎসবের মরসুম পার হয়েও করোনা সংক্রমণ সে ভাবে বাড়েনি। ফলে দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে অক্সিজেনের সঙ্কট হয়েছিল, মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল বহু গুণ, তার স্মৃতি আর ভয় দেখাতে পারছে না মানুষকে। মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহারের মতো ন্যূনতম সাবধানতা রক্ষার ক্ষেত্রেও দৃশ্যত ঢিলেমি এসেছে। এরই মধ্যে ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে দেশে। এই অবস্থায় সরকারি হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন প্লান্ট কতটা তৈরি? আইসিইউ শয্যা কত বেড়েছে? শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থার কী হল? সর্বত্র আরটিপিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে কি? ওমিক্রনের মতো অতি সংক্রামক ভাইরাসকে সামলাতে এখনকার পরিকাঠামো যথেষ্ট তো— উঠেছে এই সব প্রশ্নই।

ওমিক্রনের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা বার্তা সব জেলাকে এর মধ্যেই দেওয়া হয়েছে। তা হল— ওমিক্রন সামলাতে মূলত নমুনা পরীক্ষা বাড়ান এবং মাস্ক-স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহারের প্রচারে জোর দিন। পরিকাঠামোগত ভাবে কোথাও নতুন কিছু করার নির্দেশ আসেনি। এই কথা যেমন বীরভূমে শোনা গিয়েছে, তেমনই জানিয়েছেন হাওড়া ও হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। একই কথা শোনা গিয়েছে দুই ২৪ পরগনাতেও। পশ্চিম বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মহম্মদ ইউনুস আবার বলেছেন, “আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, এটা কোভিডের একটা রূপ।” উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য দফতরের ওএসডি সুশান্ত রায়ও বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় করোনা পরিস্থিতি যা ছিল, এখন তা নেই।’’

Advertisement

দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে অক্সিজেনের আকাল দেখা দিয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে বক্তব্য, তখন থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্যের উদ্যোগে হাসপাতাল ধরে ধরে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু হয়। অথচ এখনও দুর্গাপুর, বাঁকুড়ার ওন্দার মতো কিছু জায়গায় অক্সিজেন প্লান্টের কাজ শেষ হয়নি। দ্বিতীয়ত, আরটিপিসিআর পরীক্ষা সর্বত্রই তলানিতে এসে ঠেকেছে। উত্তরবঙ্গের সীমান্তগুলিতে পরীক্ষা কার্যত বন্ধই ছিল। এখন কেন্দ্র থেকেও নির্দেশ আসায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। যদিও উত্তরের চিকিৎসক মহল বলছে, সীমান্তগুলিতে আরটিপিসিআর পরীক্ষা চালু করা জরুরি। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভাইরোলজি ল্যাবরেটরি, যেখানে দিনে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব, সেখানে এখন হাজারটি পরীক্ষাও হয় না বলে দাবি চিকিৎসকদেরই একাংশের। মুর্শিদাবাদেও ভিন্ রাজ্য থেকে এলে বা অনুপ্রবেশের দায়ে কেউ ধরা পড়লে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পরীক্ষা যে বাড়াতে হবে, মেনে নিয়েছে হাওড়া জেলা প্রশাসনও। তুলনায় উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোলে বাংলাদেশ সীমান্তে ব্যবস্থা ভাল। সেখানে গত সপ্তাহ থেকেই আরটিপিসিআর পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

তবে সর্বত্র ছবি এক নয়। সচেতন জেলাও রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সিএমওএইচ ভুবনচন্দ্র হাঁসদা যেমন জানান, ‘‘যে দেশগুলিতে ওমিক্রনের প্রকোপ রয়েছে, সেখান থেকে কেউ জেলায় এলে তাঁর আরটিপিসিআর পরীক্ষা হবে।’’ একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নদিয়াতেও। এই জেলা বিশেষ করে নজর দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত লোকজনের প্রতি। দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষজনের উপরে নজর রাখছে হুগলিও।

দুর্গাপুজোর পরে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়েনি বলে বহু হাসপাতালেই কোভিড শয্যা এবং ওয়ার্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঝাড়গ্রাম থেকে বীরভূম বা আলিপুরদুয়ার, বহু জেলাতেই এই ছবি। সর্বত্রই অবশ্য আশ্বাস মিলেছে, সংক্রমণ বাড়লে ফের শয্যা বাড়ানো হবে, চালু হবে ওয়ার্ডও। কিন্তু বর্তমান শয্যা এবং আইসিইউ পরিকাঠামো কি অতি-সংক্রমণ সামলানোর জন্য যথেষ্ট? কত দ্রুত পরিকাঠামোকে কোভিড উপযোগী করা সম্ভব হবে, প্রশ্ন রয়েছে তাই নিয়েও।

শিশুদের আইসিইউ-ও বেশির ভাগ হাসপাতালেই তৈরি হয়ে রয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও শয্যা সংখ্যা এবং জরুরি সময়ে পরিষেবা দেওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে ১৮ বছরের কমবয়সিদের এখনও টিকা হয়নি। ফলে তাদের মধ্যে ওমিক্রন সংক্রমণ হলে তার প্রকোপ কতটা বেশি হবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে।

ঘরোয়া আলোচনায় অনেক জেলাতেই চিকিৎসকেরা মেনে নিচ্ছেন, সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ঢিলেঢালা ভাব এসেছে সকলের মধ্যে। জনগণের মধ্যে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহারের মতো ন্যূনতম সাবধানতা অবলম্বনের ক্ষেত্রেও ভীষণ রকম খামতি চোখে পড়ছে। বিধি মানানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কড়াকড়িও বিশেষ দেখা যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে ওমিক্রনের ঢেউ ধাক্কা দিলে তা সুনামির মতো সব ভাসিয়ে দেবে না তো? করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসকেরা এখন এই প্রশ্নই তুলতে শুরু করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement