প্রতিবাদ জানাতে আরজি করের বিক্ষোভ মঞ্চে বর্ষীয়ান প্রাক্তনীরাও। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
খালপাড়ের মেডিক্যাল কলেজ আরজি কর। ষাট বছর আগে এই প্রতিষ্ঠানকেই নিজেদের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলে চিনেছিলেন তাঁরা। গর্ব করে বলতেন, ‘আমরা খালু-র প্রাক্তনী’। সেই খালপাড় এখন উত্তপ্ত। তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় বিচার চেয়ে সোমবার আরজি করের আন্দোলন মঞ্চে যোগ দিলেন অশীতিপর প্রাক্তনীরা। যাঁরা ১৯৬৪ সালে শহরের এই মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন।
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে গলা মিলিয়ে চিকিৎসক তৃষিত রায়, প্রদীপরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত ধর, মন্দিরা বসু, সুমিতা চট্টোপাধ্যায়েরা দাবি তুললেন, “আমরাও বিচার চাই। কোথাও আর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।” আরজি করের জরুরি বিভাগের সামনে মঞ্চ বেঁধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন আবাসিক চিকিৎসকেরা। বিভিন্ন সময়ে সেখানে এসে যোগ দিচ্ছেন বহু সিনিয়র চিকিৎসক। যাঁদের অনেকেই আরজি করের প্রাক্তনী। এ দিন অশীতিপর প্রাক্তনীরাও দল বেঁধে যোগ দেওয়ায় তাঁদের ‘মনোবল’ বেড়েছে, বলছেন আন্দোলনকারীরা।
ওই দলে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তৃষিত রায় ছিলেন। তিনি বলেন, “এই প্রতিষ্ঠান আমাদের-ওঁদের (আন্দোলনরত আবাসিক চিকিৎসক) সবার দ্বিতীয় বাড়ি। তাই লড়াইটাও একসঙ্গেই লড়তে হবে। সেই জন্য পাশে এসে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার বার্তা দিলাম।” তৃষিতের মতো অন্যেরা জানান, তাঁদের সময়ে নকশাল আন্দোলনের প্রভাব আরজি করে কিছুটা পড়লেও, পড়ুয়ারা সবাই সুরক্ষিত ও নিরাপদ ছিলেন। প্রাক্তনী মন্দিরা বসু বলেন, “আমাদের সময়ে পড়ুয়াদের সংগঠন অরাজনৈতিক ছিল। নকশাল আন্দোলনের সময়ে কিছু গন্ডগোল হয়েছিল। এ ছাড়া কখনও কিছু হয়নি।” আন্দোলন মঞ্চে আসা প্রাক্তনীদের মধ্যে একমাত্র সুমিতা ১৯৬৮ সালে আরজি করে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এমন ভয়ঙ্কর নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না। ভবিষ্যতে কোথাও এমন ঘটনা যেন না ঘটে, সেটাই চাই। তার জন্য বিচারের দাবিতে আজকের প্রজন্মের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।”
রাখি উপলক্ষে আন্দোলনকারী আবাসিক ডাক্তারেরা প্রত্যেকে হাতে সাদা বা কালো ব্যান্ড বেঁধেছিলেন এ দিন। যাতে লেখা, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। দুপুরে কলকাতা পুলিশের তরফে আন্দোলনকারীদের হাতে বাঁধা হয় রাখি। সেই সময়ে অনেক আবাসিক পড়ুয়াই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা বলছেন, “আজ, রাখির দিন ওই দিদিরও তো থাকার কথা ছিল। কিন্তু কেন এমনটা হল?” আন্দোলন মঞ্চে হাতে আঁকা ওই তরুণীর প্রতিকৃতির সামনে রাখি দিতে দেখা যায় এক মহিলা পুলিশকর্মীকেও। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ব্যান্ড পুলিশের হাতে বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। সময় যত গড়িয়েছে, মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে, কখনও আন্দোলন মঞ্চে সবাই মিলে গেয়েছেন, ‘আমরা করব জয়...’
বিকেলে আরজি করের প্ল্যাটিনাম জুবিলি ভবনের সামনে আন্দোলনকারী আবাসিক চিকিৎসকেরা এমন ভাবে মানববন্ধন করেন, যা উপর থেকে দেখে মনে হবে একটি রাখি।