ফাইল চিত্র।
কোভিড বিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস চালাতে হলে ছাত্রছাত্রীদের ভিন্ন ভিন্ন ঘরে ভাগ করে বসানোর কথা। কিন্তু অনেক স্কুলেই যে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। বিভিন্ন বিষয়ে ‘সিঙ্গল টিচার’ বা একক শিক্ষককে দিয়ে কাজ চালানো হয়। প্রাক্-করোনাকালে এক ঘরে সব পড়ুয়াকে বসিয়ে সেই সবে ধন নীলমণি শিক্ষকই ক্লাস নিতেন। কিন্তু এখন বিধি মানার তাগিদে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। আবার উপস্থিত পড়ুয়াদের বিভিন্ন ঘরে বসিয়ে ক্লাস করানোও অসম্ভব হয়ে পড়ছে অনেক ক্ষেত্রে।
এই অবস্থায় হাজিরায় নিয়ন্ত্রণ চায় বহু স্কুল। সব পড়ুয়াকে এক দিনে স্কুলে আসতে বারণ করার কথা ভাবছে তারা। শিক্ষকদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, এটাই একমাত্র পথ। রুটিন করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের ধাপে ধাপে আসতে বলা হবে। কিছু স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ক্লাস চালুর এক সপ্তাহ পরে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার দেখেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস অবশ্য বলেন, “শিক্ষা দফতর বলেছে, সব পড়ুয়াকেই রোজ স্কুলে আসতে হবে। স্কুলগুলির পক্ষে সেই নির্দেশ অমান্য করে সব পড়ুয়াকে এক দিনে না-ডেকে আলাদা আলাদা দিনে আসতে বলা সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে।” শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, শিক্ষকের অভাবে কোভিড বিধি মেনে একাদশ ও দ্বাদশের প্র্যাক্টিক্যালেও সমস্যা হতে পারে।
কোনও স্কুল থেকে শিক্ষক বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। অনেক স্কুলে আবার বহু দিন ধরেই এক বা একাধিক বিষয়ের শিক্ষকপদ ফাঁকা। কোনও স্কুলে পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে পড়ানো হয়। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় সেই পার্টটাইম শিক্ষকও এখন নেই। ফলে বহু স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক খুব কম। কোথাও কোথাও আছেন এক জন। অধিকাংশ পড়়ুয়া আসতে শুরু করলে কোভিড বিধি মেনে ক্লাস নেওয়ার জন্য কোথা থেকে পর্যাপ্ত শিক্ষক মিলবে, বুঝে উঠতে পারছেন না প্রধান শিক্ষকদের একটি বড় অংশ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বেশির ভাগ বিষয়েই মাত্র এক জন শিক্ষক। অথচ পড়ুয়া প্রচুর। নদিয়ার সুভাবিনী গার্লস হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা রমা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সাত জন শিক্ষিকা গত কয়েক বছরে বদলি হয়েছেন। ফলে শিক্ষিকার ঘাটতি ব্যাপক। অনেক সময় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষিকাকে দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয় পড়ানো হয়। কিন্তু সব বিষয়ে তা সম্ভব নয়। তাই আমাদের আবার পার্টটাইম শিক্ষক নিয়োগের কথা ভাবতে হবে।”
মুর্শিদাবাদের সাতুই রাজেন্দ্র নারায়ণ হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হীরক দাস জানান, প্রথম দিন কম পড়ুয়া এসেছিল। কিন্তু হাজিরা বাড়লেই শিক্ষক-ঘাটতি দেখা দেবে। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের বোর্ড পরীক্ষা সামনেই। তাই তাদের উপস্থিতির হার কম। কিন্তু একাদশে অধিকাংশ পড়ুয়া চলে এলে সমস্যা তীব্রতর হবে।