ফাইল চিত্র।
ছ’বছর আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আদালতে জমে থাকা পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। তার জন্য জেলা ও নিম্ন আদালতে কোথায়, কত জন বিচারক প্রয়োজন, তার পর্যালোচনা হবে। ছ’বছর কেটে গেলেও কলকাতা হাই কোর্টে এখনও সেই কাজ হয়নি। অথচ দিল্লি, বম্বে, মাদ্রাজ-সহ গুরুত্বপূর্ণ হাই কোর্টগুলি এই কাজ সেরে ফেলেছে।
গত শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনের আলোচ্য নথি অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের জেলা ও নিম্ন আদালতগুলিতে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, ৮ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৫১টি পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলা জমে রয়েছে।
ছ’বছর আগে, ২০১৬-য় শেষ বার এই সম্মেলন বসেছিল। সেই সময়ে রাজ্যে পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলার সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪৮০টি। অর্থাৎ, গত ছ’বছরে পাঁচ বছরের বেশি বকেয়া মামলার সংখ্যা প্রায় ৮৪ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু এখনও সেই মামলার পাহাড় কমাতে যে বিচারক, বিচারবিভাগীয় কর্মী সংখ্যা পর্যালোচনা করার কথা ছিল, তা হয়নি। কেন? সম্মেলনের নথি অনুযায়ী, এই বিষয়টি এখনও হাই কোর্টের প্রশাসনিক কমিটির কাছে আটকে রয়েছে।
ছ’বছর আগে পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলা শূন্যে নামিয়ে আনতে রাজ্যের জেলা ও নিম্ন আদালতগুলিতে ১০১৩ জন বিচারক দরকার ছিল। সেই সময় কাজ করছিলেন ৮৯৭ জন। ছ’বছর পরে অনুমোদিত পদের সংখ্যা সামান্য বেড়ে হয়েছে ১০১৬টি। তবে কাজ করছেন ৯২২ জন। ফলে মামলার পাহাড় জমেছে। বিশেষত ফৌজদারি অপরাধের মামলা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা প্রায় ৮ লক্ষ ৮৫ হাজার মামলার মধ্যে ফৌজদারি অপরাধের মামলার সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ৯৫ হাজার। ছ’বছর আগে এর সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ১২ হাজার।
পুরনো মামলার বোঝা কমাতে বিচারকদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের বিচারপতিরা একটি ‘জাতীয় বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামো কর্তৃপক্ষ’ তৈরির সুপারিশ করেছিলেন। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী ও বেশ কিছু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এতে সায় দেননি। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, এতে আপত্তির কী রয়েছে! সম্মেলনের আগে রাজ্যগুলির মতামত চাওয়া হয়েছিল। যে আটটি রাজ্য মতামত জানিয়েছিল, তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ জানিয়েছিল, এতে রাজ্য সরকারের কোনও আপত্তি নেই। শনিবারের সম্মেলনে অবশ্য জাতীয় স্তরের বদলে শুধুমাত্র রাজ্য স্তরে এই কর্তৃপক্ষ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।